মাতৃত্বের যাত্রা প্রতিটি নারীর জীবনে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই সময়টায় শরীরে আসে নানা পরিবর্তন, আর তার মধ্যে একটি খুব সাধারণ সমস্যা হলো কোমর ব্যথা। গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা প্রায় ৬০-৭০% গর্ভবতী মহিলাদের জীবনেই দেখা যায়, যা দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে রাতের ঘুম পর্যন্ত সবকিছুকেই প্রভাবিত করতে পারে।
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, কেন এই সময় কোমর ব্যথা এত বাড়ে? আসলে, হরমোনের পরিবর্তন, শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং ভারসাম্য রক্ষার জন্য মেরুদণ্ডের ভঙ্গিমায় পরিবর্তন আসার ফলেই মূলত এই সমস্যা দেখা দেয়। তাই, গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং এই সমস্যা মোকাবিলা করার সঠিক উপায় খুঁজে বের করা খুব জরুরি।
যদি আপনিও এই কষ্টদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যান, তবে আপনার জন্যই আমাদের আজকের এই ব্লগ। এখানে আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার কারণ এবং এটি হলে করণীয় কি? সেই সমস্ত বিষয়, যা আপনাকে এই সময়টায় সুস্থ ও স্বচ্ছন্দ থাকতে সাহায্য করবে। সহজ কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে কীভাবে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন, চলুন সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার কারণ
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার কারণ একটি সাধারণ সমস্যা, যা গর্ভবতী নারীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার কারণগুলোর মধ্যে হরমোনাল পরিবর্তন, শারীরিক চাপ এবং জরায়ুর বৃদ্ধি প্রধান ভূমিকা পালন করে। গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার কারণগুলো নিম্নরূপ:
হরমোনাল পরিবর্তন (প্রজেস্টেরন এবং রিলাক্সিন হরমোনের প্রভাব)
গর্ভধারণের শুরু থেকেই শরীরে প্রজেস্টেরন এবং রিলাক্সিন হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এই হরমোনগুলো সন্তান জন্মদানের প্রস্তুতির জন্য কোমরের জয়েন্ট এবং লিগামেন্টগুলোকে নরম এবং ঢিলা করে দেয়, যার ফলে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর পরিণামে হাঁটা, বসা, উঠা বা কোনো শারীরিক কাজ করার সময় গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার কারণ হিসেবে এটি স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এছাড়া, এই হরমোনাল পরিবর্তন পেলভিক এলাকার জয়েন্টগুলোকে শিথিল করে, যা অস্বস্তি এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভবতী নারীদের জন্য এই পরিবর্তন স্বাভাবিক হলেও, এর ফলে কোমরের পেশীগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ব্যথাকে আরও তীব্র করে তোলে।
জরায়ুর বৃদ্ধি এবং শরীরের ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন
গর্ভকালে জরায়ু ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে, যার ফলে পেটের পেশীগুলো সম্প্রসারিত এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। এই পরিবর্তন শরীরের ভরকেন্দ্রকে সামনের দিকে সরিয়ে দেয়, যা পোজচার (অবস্থান) পরিবর্তন করে এবং কোমরের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার কারণ হিসেবে এটি সবচেয়ে সাধারণ, বিশেষ করে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, যখন ভ্রুণের আকার এবং ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে। এছাড়া, এই বৃদ্ধির ফলে পিছনের পেশীগুলোতে অসমান চাপ পড়ে, যা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো বা বসার সময় ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং চাপ
গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে অতিরিক্ত ওজন যোগ হয়, যা কোমরের হাড়, পেশী এবং জয়েন্টগুলোর উপর সরাসরি চাপ ফেলে। এই ওজন বৃদ্ধি ভ্রুণের বৃদ্ধির সাথে সাথে ঘটে, এবং এর ফলে কোমরের পিছনের অংশে অস্বস্তি অনুভূত হয়। গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি মূল উপাদান, কারণ বাড়তি ওজন শরীরের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মকে কঠিন করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, সিঁড়ি ওঠা বা ভারী জিনিস তোলার সময় এই চাপ আরও বেড়ে যায়, যা ব্যথাকে দীর্ঘস্থায়ী করে তুলতে পারে। এছাড়া, যদি পূর্ববর্তী কোনো কোমর বা পিঠের সমস্যা থাকে, তাহলে এই ওজন বৃদ্ধি সেই সমস্যাকে আরও তীব্র করে।
রাউন্ড লিগামেন্টের প্রসারণ এবং ব্যথা
পেলভিসে অবস্থিত রাউন্ড লিগামেন্টগুলো জরায়ুর বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রসারিত হয়ে পাতলা হয়ে যায়, যার ফলে হঠাৎ নড়াচড়া, কাশি, হাঁচি বা শারীরিক কাজের সময় টান পড়ে এবং তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এই লিগামেন্টগুলো জরায়ুকে স্থির রাখার কাজ করে, কিন্তু গর্ভাবস্থায় তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার কারণ হিসেবে এটি উল্লেখযোগ্য। এই ব্যথা সাধারণত চাপা ধরনের হয় এবং বিছানায় নড়াচড়া বা উঠার সময় আরও বাড়তে পারে।
সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ এবং অন্যান্য জয়েন্ট সমস্যা
জরায়ুর বৃদ্ধির ফলে সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ পড়লে কোমর থেকে উরু এবং পায়ের দিকে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে। এটি দীর্ঘক্ষণ বসা বা দাঁড়ানোর কারণে আরও তীব্র হয়। এছাড়া, পেলভিক জয়েন্ট পেইন (যেমন Symphysis Pubis Dysfunction) গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথার কারণগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ, যা জয়েন্টগুলোর অস্বাভাবিক চলমানতা থেকে উদ্ভূত হয়। এই সমস্যা শরীরের পিছনের পেশী এবং লিগামেন্টগুলোতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা ভুল অবস্থান বা পূর্ববর্তী সমস্যার সাথে যুক্ত হলে আরও জটিল হয়ে ওঠে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে কোমর ব্যথার কারণ
অনেকেই মনে করেন, গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে কোমর ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক নয়, কারণ তখন পেটের আকার তেমন বাড়ে না। তবে এই ধারণাটি ঠিক নয়। গর্ভাবস্থার একেবারে প্রথম ত্রৈমাসিকে (First Trimester) কোমর ব্যথা দেখা দেওয়ার প্রধান কারণটি হলো হরমোনজনিত পরিবর্তন। এই সময় শরীর ‘রিল্যাক্সিন’ (Relaxin) নামক এক বিশেষ হরমোন উৎপাদন শুরু করে। এই হরমোন প্রসবের প্রস্তুতির জন্য পেলভিক বা শ্রোণীচক্রের লিগামেন্টগুলোকে শিথিল এবং নরম করে তোলে।
লিগামেন্ট শিথিল হওয়ার কারণে কোমরের স্যাক্রোইলিয়াক (Sacroiliac) এবং পিউবিক সিম্ফাইসিস (Pubic Symphysis) জয়েন্টগুলোতে কিছুটা অস্থিরতা তৈরি হয়। এই অস্থিরতাই কোমরের নিচের দিকে (Low Back) চাপা ব্যথা সৃষ্টি করে। এছাড়াও, প্রথম দিকে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং শারীরিক ক্লান্তি বা স্ট্রেস-এর কারণেও অনেক সময় কোমরের পেশীগুলিতে টান পড়ে এবং ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত মৃদু হয় এবং দিনের বেলা দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার পর বাড়তে পারে।

গর্ভাবস্থায় কোমরের বাম পাশে ব্যথার কারণ কি?
গর্ভাবস্থায় কোমরের একপাশে, বিশেষ করে বাম পাশে ব্যথা হওয়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এর পিছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।
১. শরীরের ভারসাম্য পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় শরীরের মধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র (Center of Gravity) সামনের দিকে সরে যায়। এই ভারসাম্য ধরে রাখতে গিয়ে মেরুদণ্ড অতিরিক্ত বাঁকা হয়ে যায়, যাকে গর্ভাবস্থার লর্ডোসিস (Pregnancy Lordosis) বলা হয়। যদি গর্ভস্থ শিশু এবং জরায়ুর অতিরিক্ত ওজন কোনো কারণে বাম দিকে বেশি হেলে থাকে, তবে সেই দিকের পেশী, লিগামেন্ট এবং জয়েন্টগুলির উপর অসম চাপ পড়ে।
২. সায়াটিকা (Sciatica): কখনও কখনও জরায়ুর বৃদ্ধি এবং শিশুর মাথা বা দেহের চাপ মেরুদণ্ডের নীচ থেকে শুরু হওয়া সায়াটিক স্নায়ুর (Sciatic Nerve) উপর পড়তে পারে। এই স্নায়ু বাম দিক দিয়ে নিতম্ব হয়ে পা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। ফলে বাম কোমরে তীব্র ব্যথা হয়, যা বিদ্যুৎ-তরঙ্গের মতো পা পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
৩. শোবার ভঙ্গি: গর্ভবতী মহিলাদের বাম কাত হয়ে শোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি দীর্ঘ সময় ধরে ভুল ভঙ্গিতে বা অতিরিক্ত নরম বিছানায় বাম দিকে কাত হয়ে শোয়া হয়, তাহলে বাম কোমরের পেশীগুলোতে বেশি টান পড়ে এবং ব্যথা হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কোমরের ডান পাশে ব্যথার কারণ কি?
বাম পাশের মতো, কোমরের ডান দিকে ব্যথা হওয়ার কারণগুলোও প্রায় একই ধরনের। তবে কিছু নির্দিষ্ট কারণে ব্যথা ডান দিকে বেশি অনুভূত হতে পারে:
১. পেলভিক গার্ডলের ডিসফাংশন (Pelvic Girdle Dysfunction – PGD): হরমোনের প্রভাবে পেলভিক জয়েন্টের শিথিলতার কারণে এই জয়েন্টগুলির ভুল নড়াচড়া বা স্থানচ্যুতি ঘটে, যা ডান পাশের জয়েন্ট এবং লিগামেন্টগুলির উপর অতিরিক্ত টান তৈরি করতে পারে।
২. রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন (Round Ligament Pain): রাউন্ড লিগামেন্ট হলো একজোড়া মোটা লিগামেন্ট, যা জরায়ুকে পেলভিসের সাথে ধরে রাখে। জরায়ু প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে এই লিগামেন্টগুলিও প্রসারিত ও টানটান হয়। এই টানটান হওয়ার ব্যথা অনেক সময় কোমরের ডান দিক থেকে কুঁচকি বা পেটের ডান দিক পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
৩. অভ্যন্তরীণ অঙ্গের চাপ: কিছু ক্ষেত্রে, ক্রমবর্ধমান জরায়ু শরীরের ডান দিকে থাকা কিডনি বা ইউরেটারের মতো অঙ্গগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করলে সেই ব্যথা কোমরের ডান পাশে অনুভূত হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে কোমর ব্যথার কারণ
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে (সাধারণত তৃতীয় ট্রাইমেস্টার) কোমর ব্যথা সবচেয়ে বেশি হয় এবং তা প্রায় অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে। এই তীব্র ব্যথার পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি শারীরিক কারণ:
১. সর্বাধিক ওজন বৃদ্ধি: এই সময় গর্ভস্থ শিশু এবং জরায়ুর ওজন সবচেয়ে বেশি থাকে। এই বিশাল বাড়তি ওজন বহন করার জন্য মেরুদণ্ডকে তার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বাঁকাতে হয়। এই কারণে মেরুদণ্ডের ডিস্ক, কশেরুকা এবং কোমরের পেশীগুলিতে সর্বাধিক চাপ পড়ে, যা তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে।
২. পেশীর দুর্বলতা: পেটের মাংসপেশিগুলো (Abdominal Muscles) অতিরিক্ত প্রসারিত হওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়ে। এই পেশীগুলো সাধারণত মেরুদণ্ডকে সাপোর্ট দেয়। পেশী দুর্বল হয়ে যাওয়ায় কোমরের উপর ভর আরও বেশি পড়ে এবং ব্যথা বাড়ে।
৩. প্রসবের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি: প্রসবের ঠিক আগে ‘রিল্যাক্সিন’ হরমোনের নিঃসরণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। এর ফলে পেলভিক জয়েন্টগুলি এবং লিগামেন্টগুলি প্রসবের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে আরও বেশি শিথিল হয়ে যায়। এই চূড়ান্ত শিথিলতা কোমরের নিচের অংশকে খুবই অস্থিতিশীল করে তোলে এবং যেকোনো নড়াচড়ায় বাড়ে।
৪. ক্লান্তি ও ভুল ভঙ্গি: গর্ভাবস্থার শেষের দিকে শারীরিক ক্লান্তি অনেক বাড়ে। এই ক্লান্তি এবং বিশাল পেটের কারণে স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা ও বসার ভুল ভঙ্গি তৈরি হয়, যা কোমর ব্যথার তীব্রতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা একটি পরিচিত সমস্যা হলেও সঠিক পদক্ষেপ এবং জীবনযাত্রায় সামান্য কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এর তীব্রতা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। যেহেতু গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা উচিত নয়, তাই প্রাথমিকভাবে জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে আরাম খোঁজাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
১. সঠিক শারীরিক ভঙ্গি ও সচেতনতা (Posture and Awareness)
- সোজা হয়ে দাঁড়ানো ও বসা: বসার সময় পিঠ সোজা রাখুন এবং চেয়ারে পিঠের নিচের অংশে (কোমরের ভাঁজে) একটি ছোট বালিশ বা রোল করা তোয়ালে দিয়ে সাপোর্ট দিন। দীর্ঘক্ষণ একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকা থেকে বিরত থাকুন।
- ভারী জিনিস তোলা এড়িয়ে চলুন: এই সময় ভারী জিনিস তোলা কঠোরভাবে নিষেধ। যদি কিছু তুলতেই হয়, তবে কোমর না বাঁকিয়ে হাঁটু ভেঙে বসুন এবং বস্তুটিকে শরীরের কাছে রেখে ধীরে ধীরে উপরে তুলুন।
- জুতো নির্বাচন: হাই হিল বা একদম ফ্ল্যাট সোলযুক্ত জুতো পরিহার করুন। হালকা উঁচু (low-heeled) এবং নরম সোলের আরামদায়ক জুতো পরিধান করুন, যা শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
২. আরামদায়ক শোয়ার কৌশল (Sleeping Techniques)
- পাশ ফিরে শোয়া: সব সময় চিত হয়ে না শুয়ে বাঁ কাতে বা ডান কাতে শোয়ার চেষ্টা করুন। বাঁ কাতে শোয়া সবথেকে উপকারী, কারণ এটি জরায়ুতে রক্ত সরবরাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- বালিশের ব্যবহার: শোয়ার সময় দুই পায়ের মাঝখানে এবং পেটের নিচে বা পিঠের দিকে বালিশ ব্যবহার করে সাপোর্ট দিন। এটি মেরুদণ্ডকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে সাহায্য করে এবং চাপ কমায়।
৩. ঘরোয়া নিরাময় ও সেঁক (Home Remedies)
- ঠান্ডা ও গরম সেঁক: ব্যথার স্থানে ঠান্ডা এবং গরম সেঁক পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করলে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়। প্রথমে ২/৩ দিন ২০ মিনিটের জন্য ঠান্ডা সেঁক দিন, এরপর গরম সেঁক ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, পেটের অংশে কখনোই ঠান্ডা বা গরম সেঁক দেবেন না।
- হালকা মাসাজ: যখন ব্যথা বেশি হয়, তখন একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির মাধ্যমে কোমরের হালকা মাসাজ নিতে পারেন। বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাসাজ পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে।
৪. ফিজিওথেরাপি ও ব্যায়াম (Physiotherapy and Exercise)
কোমর ব্যথা কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো নিয়মিত ও সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করা। তবে, গর্ভাবস্থায় যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের (Gynecologist) পরামর্শ নিন।
- ব্যায়াম: গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সাঁতার, হাঁটা এবং ধীরে ধীরে সাইকেল চালানো (যদি সম্ভব হয়) অত্যন্ত উপকারী ব্যায়াম। এছাড়াও, পেলভিক ফ্লোর শক্তিশালী করার জন্য কিগেল এক্সারসাইজ (Kegel Exercise) এবং কোমরের পেশী শিথিল করার জন্য হালকা স্ট্রেচিং (Stretching) খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- পেশাদার ফিজিওথেরাপি: যদি কোমর ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে বা দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করে, তবে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ফিজিওথেরাপিস্ট আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু নিরাপদ ব্যায়াম শেখাবেন, যেমন – পেলভিক টিল্ট, ক্যাট-কাউ পোজ ইত্যাদি। এছাড়াও, ফিজিওথেরাপিতে কিছু ম্যানুয়াল থেরাপি বা বিশেষ কৌশল ব্যবহার করা হয় যা জয়েন্টের গতিশীলতা বজায় রাখতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
সঠিক যত্ন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে গর্ভাবস্থার এই কঠিন সময়টি কোমর ব্যথার কষ্ট ছাড়াই ভালোভাবে অতিক্রম করা সম্ভব।
অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য উত্তরা বা বনানী শাখায় সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে +8801774678604 নম্বরে যোগাযোগ করুন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ পেইন কিউর
বিস্তারিত জানুন: সহবাসের পর কোমর ব্যথা এবং সহবাসের পর ব্যথা হলে করণীয় কি?
বিস্তারিত জানুন: কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় ব্যায়াম
বিস্তারিত জানুন: কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ কি
বিস্তারিত জানুন: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়? কত হলে নরমাল
সাধারণ জিজ্ঞাসা
গর্ভাবস্থায় মেরুদন্ডে ব্যথার কারণ কী?
গর্ভাবস্থায় মেরুদণ্ডে ব্যথার প্রধান কারণ শরীরের ওজন বৃদ্ধি, যা মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। হরমোনের পরিবর্তন, বিশেষ করে রিলাক্সিন, জয়েন্ট ও লিগামেন্ট শিথিল করে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে। ভ্রূণের আকার বৃদ্ধির সাথে পেটের পেশি এবং মেরুদণ্ডে চাপ বাড়ে। অসঠিক ভঙ্গি এবং পেশির টানও এই ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গর্ভাবস্থায় নিতম্বের ব্যথার কারণ কী এবং কীভাবে এটি মোকাবেলা করবেন?
গর্ভাবস্থায় নিতম্বের ব্যথা হয় হরমোনজনিত পরিবর্তন (যেমন রিলাক্সিন), শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং ভ্রূণের চাপে পেলভিক জয়েন্ট ও লিগামেন্ট শিথিল হওয়ার কারণে। এটি মোকাবেলায় হালকা ব্যায়াম, সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা, গরম বা ঠান্ডা সেঁক এবং প্রেগন্যান্সি সাপোর্ট বেল্ট ব্যবহার উপকারী। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে পেট ব্যথার কারণ কী?
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে পেটে ব্যথা হয় জরায়ু বৃদ্ধি, লিগামেন্ট প্রসারণ এবং হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে, যা পেশি ও জয়েন্টে টান সৃষ্টি করে। গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজমের সমস্যাও এর কারণ হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক, তবে তীব্র বা অবিরাম ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Dr. Saiful Islam, PT, is a Consultant Physiotherapist with expertise in Orthopedics. He holds a BPT from Dhaka University, an MPT, and a Postgraduate Certification in Acupuncture from India, with specialized training in Ozone Therapy.







