মাথাব্যাথা না মাইগ্রেন: কিভাবে পার্থক্য বুঝবেন?

মাথাব্যাথা না মাইগ্রেন: কিভাবে পার্থক্য বুঝবেন?

মাথাব্যাথা না মাইগ্রেন এর পার্থক্য কিভাবে বুঝতে পারবেন?

মাথাব্যাথা একটি অতি পরিচিত শারীরিক সমস্যা, যা আমাদের জীবনে কোনো না কোনো সময়ে হয়েই থাকে। সাধারণভাবে, মাথাব্যাথা বলতে মাথার যেকোনো অংশে অনুভূত হওয়া ব্যথাকে বোঝায়। এটি হালকা অস্বস্তি থেকে শুরু করে তীব্র যন্ত্রণা পর্যন্ত হতে পারে। অন্যদিকে, মাইগ্রেন হলো এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যাথা যা অন্যান্য সাধারণ মাথাব্যথার চেয়ে আলাদা। এটি সাধারণত মাথার একদিকে তীব্র স্পন্দিত ব্যথা হিসেবে অনুভূত হয় এবং এর সাথে বমি বমি ভাব, বমি হওয়া এবং আলো ও শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকতে পারে। মাথাব্যাথা না মাইগ্রেন এ নিয়ে আপনি এখানে জানতে পারবেন।

মাথাব্যাথা বা মাইগ্রেন এর পার্থক্য কিভাবে বুঝতে পারবেন

মাথাব্যাথা এবং মাইগ্রেনের মধ্যে পার্থক্য জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই দুটি সমস্যার চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন। সাধারণ মাথাব্যথার জন্য হয়তো বিশ্রাম বা সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ যথেষ্ট হতে পারে, কিন্তু মাইগ্রেনের জন্য প্রয়োজন হতে পারে বিশেষ ধরনের ওষুধ এবং প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা। যদি আমরা মাথাব্যথাকে মাইগ্রেন ভেবে ভুল করি বা মাইগ্রেনকে সাধারণ মাথাব্যথা হিসেবে উপেক্ষা করি, তবে সঠিক চিকিৎসা না হওয়ার কারণে কষ্ট আরও বাড়তে পারে।

সুতরাং, মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের লক্ষণগুলো ভালোভাবে জেনে রাখা দরকার। সাধারণ মাথাব্যথা সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং মাথার উভয় দিকে হালকা বা মাঝারি ব্যথা অনুভূত হয়। এটি দৈনন্দিন কাজকর্মের সাথে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। বিপরীতে, মাইগ্রেন হঠাৎ করে শুরু হতে পারে এবং তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে, যা কাজকর্ম ব্যাহত করতে পারে। এর সাথে উল্লেখিত অন্যান্য লক্ষণগুলোও মাইগ্রেনকে সাধারণ মাথাব্যথা থেকে আলাদা করতে সাহায্য করে। এই পার্থক্যগুলো বুঝলে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়।

সাধারণ মাথাব্যথার বৈশিষ্ট্য

সাধারণ মাথাব্যথার বৈশিষ্ট্য

সাধারণ মাথাব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি পরিচিত অভিজ্ঞতা। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মানসিক চাপ বা স্ট্রেস। অতিরিক্ত কাজের চাপ, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। ঘুমের অভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং এর ফলে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। এছাড়া, শরীরে জলের অভাব বা ডিহাইড্রেশন এবং অতিরিক্ত ক্লান্তিও সাধারণ মাথাব্যথার জন্য দায়ী। দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করা বা শারীরিক পরিশ্রমের ফলে ক্লান্তি আসতে পারে এবং মাথাব্যথা শুরু হতে পারে।

সাধারণ মাথাব্যথার ব্যথার ধরন এবং অবস্থানের ক্ষেত্রে কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এই ব্যথা সাধারণত মাথার যেকোনো অংশে অনুভূত হতে পারে, তবে এটি নির্দিষ্ট কোনো একদিকে তীব্রভাবে হয় না। ব্যথার তীব্রতা সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি হয়ে থাকে, যা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। অনেক সময় এই ব্যথার সাথে ঘাড় এবং কাঁধে ব্যথা অনুভব হতে পারে। তবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্রাম নিলে এই ধরনের মাথাব্যথা সাধারণত কমে যায়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে বা হালকা ব্যথানাশক ওষুধ খেলে এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মাথাব্যথার সাধারণ কারণ (স্ট্রেস, ঘুমের অভাব, ডিহাইড্রেশন, ক্লান্তি)

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কারণে সাধারণ মাথাব্যথা হতে পারে, যার মধ্যে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস একটি প্রধান কারণ। কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের চাপ, পরীক্ষার চিন্তা, অথবা ব্যক্তিগত জীবনে কোনো উদ্বেগের কারণে আমাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলো মস্তিষ্কের রক্তনালীকে সংকুচিত করতে পারে, যার ফলে মাথাব্যথা অনুভূত হয়। দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস শরীরের অন্যান্য অংশেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং মাথাব্যথার তীব্রতা বাড়াতে পারে।

ঘুমের অভাবও সাধারণ মাথাব্যথার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীর ও মনকে সতেজ রাখে। যখন আমরা প্রয়োজনীয় ঘুম পাই না, তখন আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়। এর ফলে মাথাব্যথা শুরু হতে পারে। বিশেষ করে অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস বা ঘুমের সময়সূচীর পরিবর্তন মাথাব্যথার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ডিহাইড্রেশন বা শরীরে জলের অভাবও মাথাব্যথার একটি সাধারণ কারণ। পর্যাপ্ত জল পান না করলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এবং মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যেতে পারে, যার ফলে মাথাব্যথা অনুভূত হয়। একইভাবে, অতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক ক্লান্তির কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করা, ব্যায়াম করা বা একটানা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যথা হলে করণীয় কি তা বিস্তারিত জানতে এই পোষ্টটি পড়ে নিন।

ব্যথার ধরন ও অবস্থান

ব্যথার ধরন ও অবস্থান (মাথার যেকোনো অংশ, সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি)

সাধারণ মাথাব্যথার ব্যথার ধরন তেমন তীব্র হয় না। এটি সাধারণত হালকা অথবা মাঝারি ধরনের হয়ে থাকে, যা দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যেতে খুব বেশি অসুবিধা সৃষ্টি করে না। এই ব্যথা মাথার নির্দিষ্ট কোনো অংশে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এটি মাথার যেকোনো দিকে বা পুরো মাথায় অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় মনে হতে পারে যেন মাথার চারপাশে একটি চাপ সৃষ্টি হয়েছে অথবা হালকা ব্যথা অনুভূত হচ্ছে।

ব্যথার অবস্থানের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। কারো ক্ষেত্রে এটি কপালের দিকে বেশি অনুভূত হতে পারে, আবার কারো ক্ষেত্রে মাথার পেছনের দিকে বা মাথার উপরে ব্যথা হতে পারে। তবে, মাইগ্রেনের মতো এটি মাথার কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশে তীব্র স্পন্দিত ব্যথা হিসেবে দেখা যায় না। এই ধরনের মাথাব্যথা ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে কমেও যায়। বিশ্রাম নিলে বা সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ খেলে এই ব্যথা থেকে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।

অন্যান্য উপসর্গ (কখনো ঘাড়, কাঁধে ব্যথা, বিশ্রামে কমে যেতে পারে)

সাধারণ মাথাব্যথার সাথে কিছু আনুষঙ্গিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে, তবে এগুলো মাইগ্রেনের মতো তীব্র বা নির্দিষ্ট নয়। অনেক সময় সাধারণ মাথাব্যথার সাথে ঘাড় এবং কাঁধে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এর কারণ হলো মাথার পেশী এবং ঘাড়-কাঁধের পেশীগুলো আন্তঃসংযুক্ত, তাই মাথার পেশীতে টান পড়লে তার প্রভাব ঘাড় ও কাঁধেও পড়তে পারে। দীর্ঘক্ষণ ধরে ভুল ভঙ্গিতে বসা বা কাজ করার কারণেও এই ধরনের ব্যথা হতে পারে।

সাধারণ মাথাব্যথার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি বিশ্রাম নিলে কমে যেতে পারে। যখন আমরা বিশ্রাম নিই, তখন আমাদের শরীরের পেশীগুলো শিথিল হয় এবং মানসিক চাপ কমে আসে। এর ফলে মাথাব্যথার তীব্রতাও হ্রাস পায়। পর্যাপ্ত ঘুম এবং আরামদায়ক পরিবেশে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে সাধারণ মাথাব্যথা অনেকাংশে সেরে যায়। তবে, যদি মাথাব্যথা বিশ্রাম নেওয়ার পরেও না কমে বা ক্রমশ বাড়তে থাকে, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মাইগ্রেনের বৈশিষ্ট্য

মাইগ্রেনের বৈশিষ্ট্য

  • স্নায়বিক সমস্যা হিসেবে মাইগ্রেনের পরিচয়: মাইগ্রেন হলো একটি স্নায়বিক রোগ। এটি মস্তিষ্কের কার্যকলাপের কারণে হয়ে থাকে এবং এর প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র মাথাব্যথা। সাধারণ মাথাব্যথা থেকে মাইগ্রেন সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি কেবল মাথার যন্ত্রণা নয়, বরং স্নায়ুতন্ত্রের জটিল কার্যকলাপের ফলস্বরূপ বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করে।

মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত হঠাৎ করে শুরু হয় এবং কয়েক ঘণ্টা থেকে শুরু করে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই সময়কালে দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হতে পারে। মাইগ্রেন মস্তিষ্কের রক্তনালী, স্নায়ু এবং রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে অস্বাভাবিক interaction-এর কারণে ঘটে বলে মনে করা হয়।

  • ব্যথার ধরন: মাইগ্রেনের ব্যথা মূলত মাথার এক পাশে অনুভূত হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে উভয় পাশেও হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত স্পন্দিত বা ঝাঁকুনি ধরনের হয়ে থাকে, অনেকটা হৃদস্পন্দনের মতো অনুভব হতে পারে।

ব্যথার তীব্রতা মাঝারি থেকে তীব্র হতে পারে, যা অনেক সময় অসহ্যনীয় হয়ে ওঠে। তীব্র ব্যথার কারণে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা কঠিন হয়ে পড়ে। হাঁটাচলা বা সামান্য নড়াচড়ায় ব্যথা আরও বাড়তে পারে।

  • সাধারণ উপসর্গ: মাথাব্যথার পাশাপাশি মাইগ্রেনের আরও কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া। এছাড়াও, আলো এবং শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা (Photophobia and Phonophobia) খুব সাধারণ লক্ষণ। উজ্জ্বল আলো এবং সামান্য শব্দও এই সময় অসহ্য লাগতে পারে।

কিছু ক্ষেত্রে, রোগী চোখে ঝলকানি বা বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টিভ্রম (Visual Aura) অনুভব করতে পারেন। এটি মাথাব্যথা শুরুর আগে বা ব্যথার সময় হতে পারে।

  • অরা (Aura) ও অন্যান্য সতর্ক সংকেত: অরা হলো কিছু স্নায়বিক উপসর্গ যা মাইগ্রেনের মাথাব্যথা শুরুর আগে দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণত কয়েক মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সবচেয়ে পরিচিত অরা হলো চাক্ষুষ অরা, যেখানে রোগী চোখের সামনে আলোর ঝলকানি, আঁকাবাঁকা রেখা বা অন্ধত্বের মতো অনুভূতি পান।

চাক্ষুষ অরা ছাড়াও অন্যান্য সতর্ক সংকেতও দেখা যেতে পারে, যেমন হাতে বা পায়ে ঝিঁঝি ধরা, দুর্বলতা, কথা বলতে অসুবিধা অথবা অন্য কোনো স্নায়বিক পরিবর্তন। এই লক্ষণগুলো মাথাব্যথা শুরু হওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে।

মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের পার্থক্য নির্ধারণের মূল দিক

  • ব্যথার অবস্থান ও প্রকৃতি: সাধারণ মাথাব্যথা সাধারণত পুরো মাথায় বা মাথার কোনো নির্দিষ্ট অংশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যথা হিসেবে অনুভূত হয়। এই ব্যথা ধীরেসুস্থে শুরু হতে পারে এবং তেমন তীব্র হয় না। এটি প্রায়শই চাপা বা tension-এর মতো অনুভব হয়।

অন্যদিকে, মাইগ্রেনের ব্যথা মূলত মাথার এক পাশে অনুভূত হয় এবং এটি স্পন্দিত বা ধুকপুক করার মতো তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা উভয় পাশেও হতে পারে, তবে একপাশে তীব্রতা বেশি থাকে। এই ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হতে পারে এবং ক্রমশ বাড়তে থাকে।

  • উপসর্গের উপস্থিতি ও তীব্রতা: সাধারণ মাথাব্যথায় সাধারণত অন্য কোনো উল্লেখযোগ্য উপসর্গ থাকে না। হয়তো সামান্য অস্বস্তি লাগতে পারে, তবে বমি বমি ভাব, বমি বা আলো-শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখা যায় না।

মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে মাথাব্যথার পাশাপাশি একাধিক উপসর্গ দেখা যায় এবং এগুলোর তীব্রতাও বেশি থাকে। বমি বমি ভাব, বমি, আলোতে তাকাতে বা শব্দ শুনতে অসুবিধা (Photophobia and Phonophobia) খুবই সাধারণ লক্ষণ। কারো কারো ক্ষেত্রে চোখে ঝাপসা দেখা বা অন্য ধরনের দৃষ্টি সমস্যাও হতে পারে।

  • ব্যথা কতক্ষণ স্থায়ী হয়: সাধারণ মাথাব্যথা সাধারণত কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং বিশ্রাম নিলে বা সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ খেলে কমে যায়। এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

মাইগ্রেনের ব্যথা তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হয়, সাধারণত ৪ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত। সঠিক চিকিৎসা না নিলে বা ট্রিগার এড়িয়ে না চললে এই ব্যথা সহজে কমে না এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

  • ট্রিগার ফ্যাক্টর: সাধারণ মাথাব্যথার তেমন কোনো নির্দিষ্ট ট্রিগার ফ্যাক্টর থাকে না। এটি ক্লান্তি, সামান্য স্ট্রেস বা অন্য কোনো সাধারণ কারণে হতে পারে।

অন্যদিকে, মাইগ্রেনের ব্যথা বিভিন্ন কারণে শুরু হতে পারে, যেগুলোকে ট্রিগার ফ্যাক্টর বলা হয়। এর মধ্যে কিছু খাবার (যেমন চিজ, ক্যাফেইন), হরমোনের পরিবর্তন (যেমন মহিলাদের মাসিক চক্র), ঘুমের অভাব বা অতিরিক্ত ঘুম, এবং মানসিক চাপ অন্যতম। এই ট্রিগারগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদি আপনি নিয়মিত মাথাব্যথায় ভোগেন অথবা আপনার মাথাব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক সময় সাধারণ মনে হলেও দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসক আপনার মাথাব্যথার কারণ নির্ণয় করতে এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে উপশম দিতে পারবেন।

এছাড়াও, যদি আপনার মাথাব্যথার উপসর্গগুলো জটিল বা অস্বাভাবিক মনে হয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে হঠাৎ করে তীব্র মাথাব্যথা শুরু হওয়া, যা আগে কখনো অনুভব করেননি; ব্যথার সাথে জ্বর, ঘাড়ে ব্যথা বা শক্ত ভাব; অথবা চেতনা হ্রাস পাওয়া। এই লক্ষণগুলো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।

ঘন ঘন বমি হওয়া, দৃষ্টি সমস্যা (যেমন ঝাপসা দেখা, ডাবল ভিশন), শরীরের কোনো অংশে দুর্বলতা বা অসাড়তা, কথা বলতে অসুবিধা অথবা খিঁচুনি হলে একেবারেই দেরি করা উচিত না। এই উপসর্গগুলো স্ট্রোক, মেনিনজাইটিস বা অন্য কোনো মারাত্মক স্নায়বিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।

উপসংহার

মাথাব্যথা আর মাইগ্রেন, দুটো শুনতে একরকম লাগলেও আসলে কিন্তু এদের মধ্যে বেশ কিছু তফাৎ আছে। ব্যথার ধরণটা কেমন, কতটা বেশি ব্যথা লাগে, কতক্ষণ ধরে থাকে আর এর সাথে অন্য কী কী সমস্যা হয়—এইগুলো দেখেই ডাক্তাররা বুঝতে পারেন এটা সাধারণ মাথাব্যথা নাকি মাইগ্রেন। যেমন ধরেন, সাধারণ মাথাব্যথা হলে হয়তো পুরো মাথা ধরে থাকে আর তেমন বেশি কষ্টও হয় না, একটু বিশ্রাম নিলেই সেরে যায়। কিন্তু মাইগ্রেন হলে সাধারণত মাথার একদিকে খুব বেশি ব্যথা করে, ধুকপুকানির মতো লাগে আর বমি বমি ভাব বা আলো-শব্দে সমস্যাও হতে পারে। এই ছোটখাটো পার্থক্যগুলো জানা থাকলে নিজের শরীরের সমস্যাটা বুঝতে সুবিধা হয়।

আসলে, মাথাব্যথা আর মাইগ্রেনের মধ্যেকার এই পার্থক্যটা জানা থাকা দরকার, যাতে ঠিকমতো চিকিৎসা করানো যায়। আমরা অনেকেই সামান্য মাথাব্যথা হলে তেমন পাত্তা দেই না বা নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ খেয়ে নিই। তবে যদি কারো প্রায়ই মাথাব্যথা হয় বা ব্যথাটা খুব বেশি হয়, যা কাজকর্ম করতেও অসুবিধা সৃষ্টি করে, তাহলে একজন ভালো ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। ডাক্তার আপনার লক্ষণগুলো শুনে আর দরকার হলে কিছু পরীক্ষা করে বুঝতে পারবেন এটা আসলে কী সমস্যা।

ডাক্তার যখন রোগটা ধরতে পারেন, তখন তার দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া উচিত আর জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনাও দরকার হতে পারে। এতে করে মাইগ্রেনের তীব্রতা কমানো যায় এবং ঘন ঘন হওয়া থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। অবহেলা করলে কিন্তু এই সমস্যা অনেকদিন ধরে চলতে পারে আর জীবনটা দুর্বিষহ করে তোলে। তাই নিজের শরীরের খেয়াল রাখা আর দরকার মনে হলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।

 

মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন সম্পর্কিত যেকোনো পরামর্শ পেতে – উত্তরা- +8801727177436 এবং বনানী- +8801774678604  (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ পেইন কিউর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *