মাথা ব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অতি পরিচিত সমস্যা। প্রায় সকলেই কখনো না কখনো এই অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। এটি এতটাই সাধারণ যে অনেক সময় আমরা একে তেমন গুরুত্ব দিতে চাই না। তবে, মাথা ব্যথার তীব্রতা এবং স্থায়িত্ব বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মের উপর এর বিশেষ প্রভাব পড়তে পারে। আমাদের এই পোস্টে মাথা ব্যথা কমানোর উপায় নিয়ে বিশেষ আলোচনা করবো।
মাথা ব্যথার কারণগুলি বেশ কিছু কারণে হতে পারে। সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, ডিহাইড্রেশন, এবং অতিরিক্ত আওয়াজ বা আলো। তবে, কিছু ক্ষেত্রে সাইনাস সংক্রমণ, দাঁতের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, বা স্নায়বিক জটিলতার মতো আরও গুরুতর কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। তাই, মাথা ব্যথার উৎস নির্ধারণ করা এবং সঠিক সময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রেক্ষাপটে, মাথা ব্যথা কমানোর বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জানা আমাদের সকলের জন্য প্রয়োজনীয়। কিছু সাধারণ ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারি। তবে, কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং কোন লক্ষণগুলি উদ্বেগের কারণ হতে পারে সে সম্পর্কে সচেতন থাকাটাও জরুরি। এই আলোচনায় আমরা মাথা ব্যথা কমানোর কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায় নিয়ে আলোকপাত করবো।
গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যথা হলে কি করবেন তা আমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে জেনে নিন।

মাথা ব্যথার সাধারণ কারণ ও মাথা ব্যথা কমানোর উপায়
মাথা ব্যথার অনেক সাধারণ কারণ আছে। এর মধ্যে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা অন্যতম। ঘুমের অভাব বা অনিয়মিত ঘুমও মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। পর্যাপ্ত জল পান না করলে ডিহাইড্রেশন এবং দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিন দেখলে চোখের চাপের কারণেও মাথা ব্যথা হয়। উচ্চ শব্দ, গরম বা অতিরিক্ত আলো এবং কিছু খাবার বা পানীয়ও মাথা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, সাইনাসের সমস্যা, ঠান্ডা-জ্বর এবং মাইগ্রেনের মতো স্বাস্থ্যগত কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। নিচে আপনাদের জন্য বিস্তারিত লেখা হলোঃ
- মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা: আমাদের কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক জীবন অথবা ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হতে পারে। এই মানসিক চাপ আমাদের শরীরের পেশীগুলোকে সংকুচিত করে ফেলে, বিশেষ করে ঘাড় ও মাথার आसपासের পেশী। এই পেশী সংকোচন মাথা ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদী মাথা ব্যথার দিকেও ধাবিত করতে পারে।
- ঘুমের অভাব বা অনিয়মিত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীর ও মনকে সতেজ রাখতে অপরিহার্য। ঘুমের অভাব অথবা ঘুমের সময়সূচিতে অনিয়মিততা দেখা দিলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। এর ফলে হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তিত হতে পারে এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব পড়তে পারে, যা মাথা ব্যথার কারণ ঘটায়। নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা মাথা ব্যথা প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
- পর্যাপ্ত পানি না পান করা (ডিহাইড্রেশন): আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক কার্যকারিতার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জলের প্রয়োজন। যখন শরীরে জলের অভাব হয়, তখন ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। ডিহাইড্রেশনের কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং মস্তিষ্কে রক্তের সরবরাহ কমে যেতে পারে, যা তীব্র মাথা ব্যথার সৃষ্টি করে। তাই, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা অত্যন্ত জরুরি।
- দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিন দেখা বা চোখের চাপ: আধুনিক যুগে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। দীর্ঘক্ষণ ধরে এই ডিভাইসগুলোর স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে আমাদের চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। চোখের পেশী ক্লান্ত হয়ে যায় এবং এর ফলে মাথা ব্যথা শুরু হতে পারে। মাঝে মাঝে চোখের বিশ্রাম দেওয়া এবং স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমানো এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- উচ্চ শব্দ, গরম বা অতিরিক্ত আলো: আমাদের চারপাশের পরিবেশও মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত উচ্চ শব্দ আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করতে পারে, যা মাথা ব্যথার জন্ম দেয়। একইভাবে, অসহ্য গরম আবহাওয়া এবং খুব বেশি উজ্জ্বল আলোও আমাদের শরীরে অস্বস্তি সৃষ্টি করে এবং মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।
- কিছু খাবার বা পানীয় গ্রহণ: আমরা যা খাই বা পান করি তারও আমাদের শরীরের উপর প্রভাব পড়ে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার বা পানীয়, যেমন অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (চা, কফি), অ্যালকোহল, প্রসেসড ফুড, কৃত্রিম সুইটনার এবং মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG) কারো কারো ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা ট্রিগার করতে পারে। এই খাবারগুলো গ্রহণ করার পরে যদি মাথা ব্যথা অনুভব করেন, তবে সেগুলো পরিহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
- সাইনাস সমস্যা, ঠান্ডা-জ্বর, মাইগ্রেন ইত্যাদি: কিছু স্বাস্থ্যগত অবস্থাও মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। সাইনাসের সংক্রমণ হলে সাইনাসের ভেতরের দেয়ালে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যার ফলে কপালে, গালে এবং চোখের আশেপাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। সাধারণ ঠান্ডা বা জ্বরের সময় শরীরের দুর্বলতা এবং সংক্রমণের কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও, মাইগ্রেন একটি বিশেষ ধরনের মাথা ব্যথা যা তীব্র এবং স্পন্দিত হয় এবং এর সাথে বমি বমি ভাব, আলো বা শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকতে পারে।
এগুলো মাথা ব্যথার কিছু সাধারণ কারণ। তবে, যদি আপনার মাথা ব্যথা ঘন ঘন হয়, তীব্র হয় বা অন্যান্য অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, কিছু ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা অন্য কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।
মাথাব্যাথা না মাইগ্রেনের পার্থক্য জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।

মাথা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
মাথা ব্যথা কমাতে আমরা ঘরে কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করতে পারি। চলো, সেই উপায়গুলো একটু সহজ করে জেনে নিইঃ
- প্রথমত, কপালে ঠাণ্ডা পানি বা বরফের প্যাক ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়। ঠাণ্ডা তাপমাত্রা রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে, যা মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে। একটা পরিষ্কার কাপড় ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে অথবা বরফের প্যাক সরাসরি কপালে কিছুক্ষণ ধরে রাখলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
- মাথা, ঘাড় ও কাঁধে হালকা ম্যাসাজ করলে পেশিগুলো শিথিল হয় এবং রক্ত চলাচল বাড়ে। এর ফলে মাথাব্যথা কমে যেতে পারে। হালকা হাতে круглообраз движения-এ ম্যাসাজ করলে আরাম পাওয়া যায়।
- অনেক সময় অতিরিক্ত আলো বা শব্দের কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। তাই চোখ বন্ধ করে অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে মাথাব্যথা কমতে পারে। কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকলে শরীর ও মন শান্ত হয়।
- শরীরে পানির অভাব হলে মাথাব্যথা হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা খুবই জরুরি। ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা মাথাব্যথার একটি অন্যতম কারণ।
- হালকা গরম চা বা কফি পান করলে অনেক সময় মাথাব্যথা কমে যায়। চায়ের ক্যাফেইন এবং গরম ভাব আরাম দিতে পারে। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত না।
- আদা, তুলসি পাতার রস বা লেবু পানিও মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। আদার মধ্যে প্রদাহ-বিরোধী উপাদান রয়েছে। তুলসি পাতা শান্ত করতে সাহায্য করে এবং লেবু পানি শরীরকে সতেজ রাখে।
- গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে শরীর রিল্যাক্স হয় এবং স্ট্রেস কমে। ধীরে ধীরে লম্বা শ্বাস নিলে এবং ছাড়লে মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য পাওয়া যায়।
- কিছু বিশেষ তেল, যেমন পিপারমিন্ট তেলের হালকা ঘ্রাণ মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। মাথার ওপর সামান্য পিপারমিন্ট তেল লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করলে আরাম বোধ হয়।

হঠাৎ মাথা ব্যথা হলে করণীয়
হঠাৎ করে মাথা ব্যথা শুরু হলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি যা আমাদের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করবে। নিচে প্রতিটি করণীয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
১. কাজ বন্ধ রেখে বিশ্রাম নিনঃ যখন হঠাৎ করে মাথা ব্যথা শুরু হয়, তখন আমাদের প্রথম কাজ হলো চলমান কাজ থেকে বিরতি নেওয়া এবং বিশ্রাম করা। শারীরিক বা মানসিক চাপের কারণে অনেক সময় মাথা ব্যথা শুরু হতে পারে। কাজ চালিয়ে গেলে ব্যথা আরও বাড়তে পারে। তাই, একটি শান্ত জায়গায় গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বসুন অথবা শুয়ে পড়ুন। এতে আপনার শরীর ও মন শান্ত হবে এবং মাথা ব্যথা কিছুটা কমতে পারে।
২. আলো কমান, চোখ বন্ধ রাখুনঃ উজ্জ্বল আলো আমাদের চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা মাথাব্যথাকে আরও তীব্র করে তোলে। তাই, মাথা ব্যথা শুরু হলে ঘরের আলো কমিয়ে দিন অথবা সম্ভব হলে চোখ বন্ধ করে রাখুন। আপনি চাইলে হালকা আলোযুক্ত বা অন্ধকার একটি ঘরে বিশ্রাম নিতে পারেন। চোখের উপর চাপ কমালে মাথাব্যথা অনেকটা উপশম হতে পারে।
৩. মাথায় ঠাণ্ডা বা গরম কাপড় দিনঃ মাথা ব্যথার তীব্রতা কমাতে ঠাণ্ডা বা গরম সেঁক বেশ কার্যকর হতে পারে। ঠাণ্ডা পানি বা বরফের প্যাক কপালে বা মাথার পাশে ধরলে রক্তনালী সংকুচিত হয় এবং ব্যথা কমে। আবার, হালকা গরম পানিতে ভেজানো কাপড় বা গরম জলের ব্যাগ ব্যবহার করলে মাংসপেশি শিথিল হয় এবং আরাম পাওয়া যায়। আপনার কাছে যেটা সহজলভ্য এবং যেটাতে আপনি আরাম বোধ করেন, সেটাই ব্যবহার করতে পারেন।
৪. পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ শরীরে পানির অভাব বা ডিহাইড্রেশন মাথাব্যথার একটি অন্যতম কারণ। তাই, যখনই মাথা ব্যথা অনুভব করবেন, চেষ্টা করুন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে। ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে পানি পান করা ভালো। অনেক সময় শুধু পানি পান করার মাধ্যমেই হালকা মাথাব্যথা সেরে যায়।
৫. ব্যথা বেশি হলে সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ (যেমন- প্যারাসিটামল) খেতে পারেনঃ যদি মাথা ব্যথা খুব বেশি তীব্র হয় এবং অন্যান্য ঘরোয়া উপায়ে কোনো আরাম না পাওয়া যায়, তাহলে আপনি সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন প্যারাসিটামল গ্রহণ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে তার প্যাকেজের নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ে নেওয়া জরুরি। অতিরিক্ত বা ভুল ডোজে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
যদি আপনার অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে বা আপনি অন্য কোনো ওষুধ গ্রহণ করেন, তাহলে ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
৬. বমি বা দুর্বলতা থাকলে শুয়ে থাকুন এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিনঃ যদি আপনার মাথা ব্যথার সাথে বমি, ঝাপসা দেখা, কথা বলতে অসুবিধা, শরীরের কোনো অংশে দুর্বলতা বা অসাড়তা অনুভব করেন, তাহলে बिल्कुल দেরি না করে तुरंत একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এই লক্ষণগুলো সাধারণ মাথাব্যথার চেয়ে ভিন্ন এবং অন্য কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
মাথা ব্যথা থামাতে এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
- আপনাকে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুমের দিকে নজর দিতে হবে। ভালো স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো খুব জরুরি। ঘুমের অভাব বা অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস কিন্তু মাথাব্যথার একটা বড় কারণ হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়ার।
- আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করতে হবে। আমাদের শরীরের কাজকর্ম ঠিক রাখার জন্য যথেষ্ট জল খাওয়া দরকার। শরীরে জলের অভাব হলে বা ডিহাইড্রেশন হলে মাথাব্যথা হতে পারে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে অনেকটা জল পান করার চেষ্টা করুন।
- আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। ভালো ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া আমাদের পুরো শরীরের জন্য খুব দরকারি। ফাস্ট ফুড বা বেশি তেল-মসলার খাবার এড়িয়ে চলুন। ফল, সবজি আর শস্যের মতো খাবার বেশি করে খান। নিয়ম করে সঠিক খাবার খেলে মাথাব্যথা অনেকটাই কমানো যায়।
- আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। হালকা হোক বা মাঝারি, রোজ ব্যায়াম করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। ব্যায়াম করলে আমাদের রক্ত চলাচল ভালো হয় আর মানসিক চাপও কমে, যা মাথাব্যথা প্রতিরোধের জন্য খুব দরকারি। তবে খুব বেশি ক্লান্তিকর ব্যায়াম না করাই ভালো।
- আপনাকে মানসিক চাপ কমানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। বেশি চিন্তা বা টেনশন কিন্তু মাথাব্যথার একটা বড় কারণ। যোগা, ধ্যান বা পছন্দের কিছু করার মাধ্যমে আপনি আপনার মানসিক চাপ কমাতে পারেন। একটা গোছানো জীবন আর সময়ের সঠিক ব্যবহারও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- আপনাকে স্ক্রিন ব্যবহারের সময় কমাতে হবে এবং চোখের যত্ন নিতে হবে। আজকাল আমরা সবাই ল্যাপটপ, মোবাইল বা টিভিতে অনেক সময় কাটাই। এর ফলে চোখের উপর চাপ পড়ে আর মাথা ব্যথা হতে পারে। তাই বেশিক্ষণ ধরে স্ক্রিনে কাজ করলে বা দেখলে মাঝে মাঝে বিরতি নিন আর চোখকে বিশ্রাম দিন। চোখের কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে কোন কারণে আপনার মাথাব্যথা হয় এবং সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। হয়তো কোনো বিশেষ খাবার, গন্ধ বা পরিবেশ আপনার মাথাব্যথা বাড়িয়ে দেয়। নিজের শরীরটাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে অনেক সময় কারণটা ধরা পড়ে, আর তখন সেটা এড়িয়ে চলা সহজ হয়।

মাথা ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপির চিকিৎসা
মাথা ব্যথা কমানোর জন্য ফিজিওথেরাপি একটা কাজের চিকিৎসা হতে পারে। আমাদের ঘাড়, কাঁধ অথবা মাথার কাছের মাংসপেশিগুলোতে যখন টান লাগে বা সেগুলো শক্ত হয়ে যায়, তখন মাথা ব্যথা শুরু হতে পারে। এমনকি মেরুদণ্ডের কিছু সমস্যার কারণেও মাথার যন্ত্রণা হতে পারে। ফিজিওথেরাপির আসল কাজ হলো এই পেশিগুলোর টান কমানো, সেগুলোকে নরম করা এবং মেরুদণ্ডকে আগের মতো স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে সাহায্য করা। এর ফলে আমাদের মাথার ওপর যে বাড়তি চাপ পড়ে, সেটা কমে যায় আর যারা কষ্ট পাচ্ছেন তারা আরাম পান।
ফিজিওথেরাপিস্টরা প্রথমে যিনি মাথা ব্যথায় ভুগছেন তার সমস্যার কারণ জানার জন্য কিছু পরীক্ষা করেন। এরপর সেই অনুযায়ী তারা চিকিৎসার একটা পরিকল্পনা করেন। এই চিকিৎসায় সাধারণত কিছু সহজ ব্যায়াম শেখানো হয়, যা আমাদের ঘাড় ও কাঁধের পেশিকে শক্তিশালী করে এবং সেগুলোকে সহজে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, স্ট্রেচিং করার মাধ্যমে পেশিগুলোর মধ্যে যে জমাট ভাব থাকে, সেটা কমানো যায়। দরকার হলে ফিজিওথেরাপিস্টরা তাদের হাত দিয়ে কিছু বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে মাসাজ করেন অথবা আমাদের শরীরের জোড়াগুলোর মুভমেন্ট ঠিক করেন, যাকে ম্যানুয়াল থেরাপি বলে।
নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিলে শুধু মাথা ব্যথাই কমে না, বরং এই ব্যথা বারবার হওয়ার চান্সও কমে যায়। ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীকে এমন কিছু নিয়ম আর ব্যায়াম শিখিয়ে দেন, যেগুলো তারা বাড়িতেও করতে পারেন। এর ফলে অনেক দিন ধরে উপকার পাওয়া যায় এবং ওষুধ ছাড়াই মাথা ব্যথার সমস্যা কন্ট্রোল করা যায়। যদি আপনি প্রায়ই মাথা ব্যথায় ভোগেন, তাহলে একজন ভালো ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে পরামর্শ নিতে পারেন।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
মাথা ব্যথা নিয়ে কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত, সেটা জানা খুব জরুরি। যদি আপনার মাথা ব্যথা অনেক দিন ধরে চলতে থাকে অথবা ঘন ঘন হতে থাকে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ একটানা বা বারবার মাথা ব্যথা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া, যদি ব্যথার সাথে সাথে জ্বর আসে, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, চোখে ঝাপসা দেখেন, শরীর দুর্বল লাগে, বমি হয় অথবা অজ্ঞান হয়ে যান, তাহলে একদম দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। এই লক্ষণগুলো সাধারণ মাথা ব্যথার চেয়ে আলাদা এবং গুরুতর হতে পারে।
অন্যদিকে, যদি আপনার মাথা ব্যথা খুব বেশি তীব্র হয় অথবা হঠাৎ করে এমন অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভব করেন যা আগে কখনো হয়নি, তাহলেও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার। অনেক সময় হঠাৎ করে হওয়া তীব্র মাথা ব্যথা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার সংকেত দিতে পারে। তাই নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখা এবং প্রয়োজনে সঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
উপসংহার
মাথা ব্যথা, যদিও খুব সাধারণ একটি সমস্যা, আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বেশ অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তবে ভালো খবর হলো, বেশিরভাগ মাথা ব্যথাই সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। আমরা অনেকেই জানি, কপালে ঠান্ডা पट्टी দেওয়া, হালকা ম্যাসাজ করা, অন্ধকার ঘরে বিশ্রাম নেওয়া অথবা পর্যাপ্ত জল পান করার মতো কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। তাই সামান্য মাথা ব্যথায় অস্থির না হয়ে প্রথমে এই সহজ পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
হঠাৎ করে মাথা ব্যথা শুরু হলে কাজ থামিয়ে বিশ্রাম নেওয়া, আলো কমিয়ে চোখ বন্ধ রাখা, মাথায় ঠান্ডা বা গরম সেঁক দেওয়া এবং অবশ্যই জল পান করা উচিত। যদি ব্যথা খুব বেশি হয়, তবে সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, যদি মাথাব্যথার সাথে বমি, দুর্বলতা বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ সেটি অন্য কোনো গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
সবমিলিয়ে, মাথা ব্যথা সাধারণত তেমন ভয়ের কিছু নয় এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে এর উপশম সম্ভব। তবে যদি আপনার মাথা ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, ঘন ঘন ফিরে আসে অথবা তীব্র হয়, তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি আপনার সমস্যার মূল কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন, যাতে আপনি একটি স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন।
যেকোনো রকম পরামর্শ পেতে – উত্তরা- +8801727177436 এবং বনানী- +8801774678604 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ পেইন কিউর

Dr. Saiful Islam, PT, is a Consultant Physiotherapist with expertise in Orthopedics. He holds a BPT from Dhaka University, an MPT, and a Postgraduate Certification in Acupuncture from India, with specialized training in Ozone Therapy. (Best physiotherapist in Dhaka)

