ঘাড় ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং এর লক্ষণগুলিও ভিন্ন হতে পারে। সাধারণভাবে, ঘাড়ে তীক্ষ্ণ বা ভোঁতা ব্যথা, ঘাড় নাড়াতে অসুবিধা, পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, কাঁধ বা হাতের দিকে ব্যথা ছড়িয়ে যাওয়া, ঝিনঝিন বা অসাড় ভাব, এবং দুর্বলতা অনুভব করা ঘাড় ব্যথার লক্ষণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ঘাড় ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরাও দেখা দিতে পারে। দীর্ঘক্ষণ ধরে একই ভঙ্গিতে বসে থাকা, আঘাত, খারাপ ঘুমের ভঙ্গি, অতিরিক্ত কাজের চাপ, বা আর্থ্রাইটিসের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। প্রথমে, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া এবং ঘাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়া এড়িয়ে যাওয়া জরুরি। গরম বা ঠান্ডা সেঁক দিলে পেশী শিথিল হতে পারে এবং ব্যথা কমতে পারে। হালকা ঘাড়ের ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং ঘাড়ের নড়াচড়া বাড়াতে এবং পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। বসার বা দাঁড়ানোর সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা, এবং ঘুমের সময় উপযুক্ত বালিশ ব্যবহার করাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
যদি ঘাড় ব্যথা তীব্র হয়, দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, বা হাতের দুর্বলতা, ঝিনঝিন ভাব, মাথাব্যথা বা অন্য কোনও অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তার আপনার লক্ষণগুলি মূল্যায়ন করে সঠিক কারণ নির্ণয় করতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে পারবেন। কিছু ক্ষেত্রে, ফিজিওথেরাপি বা অন্যান্য বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। তাই, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়া এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য চাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
মাথা ব্যথা কমানোর উপায় ও করনীয় এই পোস্টে থেকে জানুন।

ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ?
ঘাড় ব্যথার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ঘাড়ে তীক্ষ্ণ বা ভোঁতা ব্যথা, ঘাড় নাড়াতে অসুবিধা, পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা এবং কাঁধ বা হাতের দিকে ব্যথা ছড়িয়ে যাওয়া। এছাড়াও ঝিনঝিন বা অসাড় ভাব, দুর্বলতা অনুভব করা এবং কিছু ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরাও দেখা দিতে পারে। দীর্ঘক্ষণ ধরে ভুল ভঙ্গিতে থাকা, আঘাত, ঘুমের সমস্যা বা শারীরিক অসুস্থতার কারণে এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে।
ঘাড় ব্যথার সাধারণ লক্ষণসমূহ
ঘাড় ব্যথার সাধারণ লক্ষণগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
- ঘাড়ে অস্বস্তি, ব্যথা বা টান অনুভব হওয়াঃ ঘাড় ব্যথার প্রাথমিক এবং সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো ঘাড়ে অস্বস্তি বোধ করা। এই অস্বস্তি হালকা টান থেকে শুরু করে তীব্র ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে। ব্যথা এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে অথবা নড়াচড়া করলে বাড়তে পারে। অনেক সময় ঘাড়ের পেশিগুলোতে একটি চাপা বা শক্ত ভাব অনুভূত হয়।
- ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া বা নড়াতে অসুবিধাঃ ঘাড়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া কমে যাওয়া বা সীমিত হয়ে যাওয়া একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। বিশেষ করে ঘুম থেকে ওঠার পরে ঘাড় শক্ত লাগতে পারে এবং ডানে-বামে বা উপরে-নিচে ঘোরাতে কষ্ট হতে পারে। এই কারণে দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন – পেছনে তাকানো বা কোনো কিছু উপরে দেখা কঠিন হয়ে পড়ে।
- ঘাড়ের ব্যথা কাঁধ, পিঠ, মাথা বা বাহুতে ছড়িয়ে পড়াঃ ঘাড়ের ব্যথা শুধু ঘাড়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি কাঁধের উপরের অংশে, দুই কাঁধের মাঝখানে পিঠের দিকে, মাথার পেছনের দিকে (যা থেকে মাথাব্যথা শুরু হতে পারে) এবং বাহু পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ব্যথার এই ছড়িয়ে পড়া স্নায়ুর সমস্যার কারণে হতে পারে।
- হাতে বা বাহুতে ঝিনঝিন, অবশ বা সুচ ফোটানোর অনুভূতিঃ ঘাড়ের স্নায়ুগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হলে, এর প্রভাবে হাতে বা বাহুতে এক ধরনের অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, যা ঝিনঝিন, অবশ অথবা সুচ ফোটানোর মতো মনে হয়। এই অনুভূতি সাধারণত কনুই থেকে শুরু করে আঙুলের ডগা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের অনুভূতি স্নায়ুমূলের কম্প্রেশন বা (Root Compression) এর কারণে ঘটে থাকে। মেরুদণ্ডের হাড়ের মধ্যে থাকা স্নায়ু যখন কোনো কারণে সংকুচিত হয়, তখন স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এবং এই ধরনের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।
- অন্যান্য লক্ষণঃ ঘাড় ব্যথার সাথে সাথে কিছু আনুষঙ্গিক লক্ষণও দেখা দিতে পারে যা রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মাথাব্যথা। ঘাড়ের পেশি এবং স্নায়ুগুলোতে সমস্যা হলে প্রায়শই টেনশনজনিত মাথাব্যথা অনুভূত হয়। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত মাথার পেছনের দিক থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে কপালে পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে, যা বেশ অস্বস্তিকর হতে পারে। এছাড়াও, ঘাড়ে ফোলাভাব দেখা যেতে পারে।
- কোনো আঘাত লাগলে, প্রদাহ হলে অথবা অন্য কোনো কারণে ঘাড়ের কোনো অংশে ফুলে যেতে পারে। সংক্রমণের ক্ষেত্রে ঘাড়ের ত্বক লালচে হয়ে যেতে পারে এবং আক্রান্ত স্থানে গরম অনুভূত হতে পারে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো জ্বর। যদি ঘাড় ব্যথার সাথে জ্বর থাকে, তবে এটি শরীরের কোনো অংশে সংক্রমণের ইঙ্গিত দিতে পারে এবং এই অবস্থায় দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ সংক্রমণ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
- গুরুতর ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহঃ গুরুতর পরিস্থিতিতে ঘাড় ব্যথার কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে যা উপেক্ষা করা উচিত নয়। এই লক্ষণগুলো সাধারণত স্নায়ুর উপর অতিরিক্ত চাপ অথবা মেরুদণ্ডের গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত বহন করে। এর মধ্যে একটি হলো পা বা হাতের দুর্বলতা। যখন ঘাড়ের স্নায়ুগুলোর উপর অস্বাভাবিক চাপ পড়ে, তখন হাত বা পায়ে দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। এর ফলে দৈনন্দিন কাজকর্ম, যেমন ভারী জিনিস তোলা বা হাঁটাচলা করতেও বেশ অসুবিধা হতে পারে।
- আরেকটি গুরুতর লক্ষণ হলো শরীরের বিভিন্ন অংশে অসাড়তা, বিশেষ করে হাত বা পায়ে অনুভূতি কমে যাওয়া অথবা অসাড় লাগা। এটি স্নায়ুর ক্ষতির একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। সবচেয়ে উদ্বেগজনক লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মলত্যাগ বা প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ হারানো। এটি একটি অত্যন্ত জরুরি অবস্থা এবং সাধারণত মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ডের উপর अत्यधिक চাপের কারণে ঘটে থাকে। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে কোনো প্রকার বিলম্ব না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অত্যাবশ্যক, কারণ এটি গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতার পূর্বাভাস দিতে পারে।
ঘাড় ব্যথার কারণ বিভিন্ন হতে পারে, যেমন – ভুল দেহভঙ্গি, আঘাত, পেশিতে টান, আর্থ্রাইটিস, স্নায়ুর সমস্যা ইত্যাদি। যদি আপনি এই লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনোটি অনুভব করেন, তবে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হঠাৎ মাথা ব্যথা হওয়ার কারণ এই পোস্টের মাধ্যমে জানুন।

ঘাড় ব্যথার সম্ভাব্য কারণ
ঘাড় ব্যথার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। নিচে এই সম্ভাব্য কারণগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
- ভুল ভঙ্গিতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা কাজ করাঃ আধুনিক জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে ভুল ভঙ্গিতে বসে কাজ করা ঘাড় ব্যথার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। কুঁজো হয়ে বসা, ঘাড় সামান্য ঝুঁকিয়ে রাখা অথবা দীর্ঘক্ষণ ধরে একই অবস্থানে থাকা ঘাড়ের পেশি ও লিগামেন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে ঘাড়ে ব্যথা, stiffness এবং অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। শুধু বসে থাকা নয়, দাঁড়িয়ে কাজ করার সময় ভুল ভঙ্গিও ঘাড়ের সমস্যার কারণ হতে পারে।
- ঘুমের সময় অস্বস্তিকর অবস্থান বা অনুপযুক্ত বালিশ ব্যবহারঃ ঘুমের সময় আমাদের শরীরের অবস্থান এবং বালিশের ব্যবহার ঘাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত উঁচু বা নিচু বালিশ ব্যবহার করলে ঘাড়ের স্বাভাবিক বক্রতা বজায় থাকে না, যার ফলে ঘাড়ের পেশি ও স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে। একইভাবে, পেটের উপর ভর দিয়ে ঘুমালে ঘাড় একদিকে বাঁকানো থাকে যা দীর্ঘক্ষণ ধরে ঘাড়ের পেশি ও লিগামেন্টের উপর টান সৃষ্টি করে এবং ব্যথার কারণ হতে পারে।
- পেশীর টান, স্ট্রেন বা আঘাতঃ হঠাৎ করে ঘাড়ে ঝাঁকুনি লাগলে, ভারী জিনিস তোলার সময় ভুল মুভমেন্ট করলে অথবা অতিরিক্ত শারীরিক কার্যকলাপের কারণে ঘাড়ের পেশিতে টান (muscle strain) লাগতে পারে। এছাড়াও, দীর্ঘক্ষণ ধরে অস্বাভাবিক অবস্থানে থাকার কারণেও ঘাড়ের পেশিগুলোতে strain হতে পারে। সরাসরি আঘাত, যেমন পড়ে যাওয়া বা ধাক্কা লাগার কারণেও ঘাড়ে ব্যথা এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- দুর্ঘটনা, বিশেষত হুইপ্ল্যাশ ইনজুরিঃ গাড়ির পেছনের দিক থেকে ধাক্কা লাগলে হঠাৎ করে ঘাড়ের সামনের দিকে এবং পেছনের দিকে ঝাঁকুনি লাগে, যাকে হুইপ্ল্যাশ ইনজুরি (whiplash injury) বলা হয়। এই ধরনের দুর্ঘটনায় ঘাড়ের পেশি, লিগামেন্ট এবং অন্যান্য টিস্যুতে মারাত্মক আঘাত লাগতে পারে, যার ফলে তীব্র ব্যথা এবং দীর্ঘমেয়াদী ঘাড়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- স্পাইনাল কর্ডের টিস্যু ফুলে যাওয়া বা স্লিপ ডিস্কঃ মেরুদণ্ডের হাড়ের মাঝে থাকা ডিস্কগুলো যখন সরে যায় (herniated disc) অথবা ফেটে যায়, তখন ভেতরের নরম অংশটি বেরিয়ে এসে স্পাইনাল কর্ড বা স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ঘাড়ের ক্ষেত্রে, সার্ভাইকাল ডিস্ক সরে গেলে বা ফেটে গেলে ঘাড়ে তীব্র ব্যথা হতে পারে যা কাঁধ, বাহু এবং হাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্পাইনাল কর্ডের টিস্যু ফুলে যাওয়া (inflammation) বা অন্য কোনো কারণে স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি হলেও একই ধরনের লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
- আর্থ্রাইটিস, মেনিনজাইটিস, টিউমার ইত্যাদি গুরুতর রোগঃ কিছু গুরুতর রোগও ঘাড় ব্যথার কারণ হতে পারে। আর্থ্রাইটিস, বিশেষ করে স্পন্ডাইলোসিস (cervical spondylosis), ঘাড়ের হাড় এবং কার্টিলেজের ক্ষয় ঘটিয়ে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। মেনিনজাইটিস হলো মস্তিষ্কের এবং স্পাইনাল কর্ডের আবরণের প্রদাহ, যার একটি লক্ষণ ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া এবং ব্যথা। এছাড়াও, ঘাড়ের আশেপাশে টিউমার হলে স্নায়ুর উপর চাপ পড়তে পারে এবং ব্যথা হতে পারে। এই ধরনের রোগগুলোতে ঘাড় ব্যথার সাথে অন্যান্য গুরুতর লক্ষণও থাকতে পারে।
- মানসিক চাপ বা টেনশনঃ মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরের পেশিগুলোকে সংকুচিত করতে পারে, যার মধ্যে ঘাড়ের পেশিও অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ঘাড়ের পেশিগুলোতে tension সৃষ্টি করে এবং ব্যথার কারণ হতে পারে। অনেক সময় মানসিক চাপের কারণে আমরা অজান্তেই ঘাড় শক্ত করে রাখি, যা পরবর্তীতে ব্যথায় রূপ নেয়।
সিজারের পর মাথা ব্যথা কেন হয় জানেন? না জানলে জেনে নিন।

ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়
ঘাড় ব্যথা হলে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনা দরকার যা ব্যথা কমাতে এবং পুনরায় হওয়া প্রতিরোধ করতে সহায়ক হতে পারে। প্রথমত, বসার সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখা এবং সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা খুবই জরুরি। কম্পিউটার, মোবাইল বা ডেস্কে কাজ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন স্ক্রিন চোখের সমান উচ্চতায় থাকে, যাতে ঘাড় অতিরিক্ত ঝোঁকাতে না হয়। একটানা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা উচিত নয়; প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার উঠে দাঁড়ানো, হাঁটাচলা করা এবং ঘাড়ের হালকা ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, ঘুমের সময় আরামদায়ক এবং ঘাড়ের জন্য সহায়ক বালিশ ও বিছানা ব্যবহার করা উচিত। অতিরিক্ত উঁচু বা নিচু বালিশ পরিহার করে এমন বালিশ ব্যবহার করা উচিত যা ঘাড়ের স্বাভাবিক বক্রতাকে সমর্থন করে। শক্ত বা অতিরিক্ত নরম বিছানার পরিবর্তে মাঝারি ধরনের বিছানা ব্যবহার করা ভালো যা মেরুদণ্ডকে সঠিক অবস্থানে রাখতে সাহায্য করে। এই ছোটখাটো পরিবর্তনগুলো ঘাড়ের উপর চাপ কমাতে এবং ব্যথা উপশমে significant ভূমিকা রাখতে পারে।
ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং
ঘাড় ব্যথার উপশমে এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঘাড়ের পেশিগুলোকে নমনীয় এবং শক্তিশালী রাখতে প্রতিদিন কিছু সহজ ব্যায়াম করা উচিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ধীরে ধীরে ঘাড় সামনে ও পেছনে ঝোঁকানো, ডানে ও বামে ঘোরানো এবং ঘড়ির কাঁটার দিকে ও বিপরীত দিকে বৃত্তাকারে ঘোরানো। প্রতিটি মুভমেন্ট ধীরে ধীরে এবং সাবধানে করা উচিত, কোনো প্রকার ঝাঁকুনি দেওয়া উচিত নয়। এই ব্যায়ামগুলো ঘাড়ের পেশির টান কমায় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে।
ঘাড়ের ব্যথায় কিছু যোগাসন আরাম দিতে পারে। ভরদ্বাজাসন, একটি বসার ভঙ্গি, ঘাড় ও কাঁধের পেশিকে প্রসারিত করে। বালাসন মেরুদণ্ড ও ঘাড়ের পেশি শিথিল করে। অন্যদিকে, শবাসন পুরো শরীরকে বিশ্রাম দিয়ে মানসিক চাপ কমায়, যা ঘাড়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে, তীব্র ব্যথা থাকলে বা নতুন কোনো ব্যায়াম শুরুর আগে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ঘরোয়া প্রতিকার
ঘাড় ব্যথার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার বেশ আরাম দিতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আইস প্যাক বা গরম কাপড়ের সেঁক ব্যবহার করা। তীব্র ব্যথায় ফোলাভাব কমাতে বরফের সেঁক দেওয়া যেতে পারে, যা ১৫-২০ মিনিট ধরে দিনে কয়েকবার লাগানো উচিত। আবার, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় পেশি শিথিল করতে গরম সেঁক ব্যবহার করা যেতে পারে। গরম জলের ব্যাগ বা গরম তোয়ালে ব্যবহার করে একই নিয়মে সেঁক নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও, আপেল সিডার ভিনেগার মিশ্রিত জল দিয়ে সেঁক দেওয়া একটি প্রচলিত ঘরোয়া পদ্ধতি। হালকা গরম জলে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে সেই জলে তোয়ালে ভিজিয়ে ঘাড়ে কিছুক্ষণ রাখলে আরাম পাওয়া যেতে পারে। হালকা হাতে ঘাড়ের পেশি ম্যাসাজ করাও উপকারি, তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো প্রকার অতিরিক্ত চাপ না পড়ে এবং সম্ভব হলে কোনো প্রশিক্ষিত ব্যক্তির সাহায্য নেওয়া উচিত। সর্বোপরি, ঘাড় ব্যথা হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। অতিরিক্ত কাজকর্ম বা দীর্ঘক্ষণ ধরে একই ভঙ্গিতে থাকা এড়িয়ে যাওয়া উচিত যাতে ঘাড়ের পেশি পুনরায় সেরে ওঠার সময় পায়।
সাইনাসের ব্যথা কমানোর উপায় আমাদের এই লেখা থেকে পড়ে নিন।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
ঘাড় ব্যথায় ভুগলে দ্রুত আরাম পেতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যদি আপনার ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় অথবা তীব্রতা অনেক বেশি থাকে, তাহলে দেরি না করে একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের কাছে যান। তিনি আপনার শারীরিক অবস্থা ভালোভাবে পরীক্ষা করে ব্যথার কারণ নির্ণয় করবেন এবং সেই অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।
ফিজিওথেরাপিস্ট বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন, যেমন ম্যানুয়াল থেরাপি, থেরাপিউটিক ব্যায়াম, ট্র্যাকশন এবং অন্যান্য আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন। এই চিকিৎসাগুলির মূল উদ্দেশ্য হলো আপনার ঘাড়ের মাংসপেশি ও জয়েন্টগুলির স্বাভাবিক কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনা, ব্যথা কমানো এবং পুনরায় ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি কমানো। বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে এই চিকিৎসা গ্রহণ করলে আপনি ধীরে ধীরে ঘাড় ব্যথার অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
অনেক সময় ঘাড় ব্যথার সঠিক কারণ জানার জন্য কিছু পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে। আপনার ফিজিওথেরাপিস্ট যদি মনে করেন, তাহলে তিনি আপনাকে এক্স-রে, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই-এর মতো পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন। এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে ঘাড়ের হাড়, স্নায়ু অথবা অন্য কোনো টিস্যুতে কোনো সমস্যা আছে কিনা, তা সঠিকভাবে জানা যায়। পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, আপনার চিকিৎসার পরিকল্পনা আরও ভালোভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয় এবং আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য। নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং শরীরকে সচল রাখা এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা অথবা যোগাভ্যাসের মতো হালকা ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটি কেবল শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সক্রিয় রাখে না, বরং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত ওজন কমাতে সহায়ক। পাশাপাশি, দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে না থেকে মাঝে মাঝে ওঠা এবং সামান্য হাঁটাচলা করাও জরুরি। লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করার অভ্যাসও শরীরকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, ভারী ব্যাগ বা ওজন ঘাড়ে বহন করা এড়িয়ে চলা উচিত। যদি বহন করতেই হয়, তাহলে খেয়াল রাখতে হবে যাতে উভয় কাঁধে সমান भार পড়ে। ভুলভাবে ওজন বহন করলে ঘাড়, কোমর এবং পিঠে ব্যথা হতে পারে। মানসিক চাপ কমানোও শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে। তাই, পর্যাপ্ত ঘুম, সময়মতো বিশ্রাম এবং শখের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রয়োজন হলে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ।
বিশেষ সতর্কতা
আমাদের শরীরের যে কোনও ব্যথাকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়, বিশেষ করে যদি এর সাথে কিছু বাড়তি উপসর্গ দেখা যায়। যদি ব্যথার পাশাপাশি হাত-পায়ে দুর্বলতা অনুভব করেন, অথবা যদি মনে হয় যেন আপনার হাত বা পা অবশ হয়ে আসছে, তাহলে তা গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় স্নায়ুর ওপর চাপ পড়লে এমনটা হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা না করালে স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একইভাবে, যদি প্রস্রাব বা মলত্যাগের ক্ষেত্রে কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন, যেমন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা অথবা একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়া, তবে এটিও একটি জরুরি medical অবস্থা। এই ধরনের উপসর্গগুলো সাধারণত স্নায়ুতন্ত্রের গুরুতর সমস্যা অথবা মেরুদণ্ডের আঘাতের কারণে হতে পারে।
অতএব, এই ধরনের বিশেষ সতর্কতাগুলি মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। যদি আপনি এমন কোনও লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে একেবারেই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। নিজে থেকে কোনও ওষুধ না খেয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা উচিত। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। অবহেলা করলে ছোট সমস্যাও বড় আকার ধারণ করতে পারে, যা পরবর্তীতে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হন এবং কোনও অস্বাভাবিকতা দেখলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।
যেকোনো ধরণের পরামর্শ পেতে – উত্তরা- +8801727177436 এবং বনানী- +8801774678604 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ পেইন কিউর

Dr. Saiful Islam, PT, is a Consultant Physiotherapist with expertise in Orthopedics. He holds a BPT from Dhaka University, an MPT, and a Postgraduate Certification in Acupuncture from India, with specialized training in Ozone Therapy.

