ঘড়িতে যখন ১১টা ১৯ মিনিট, আর আপনি বসে আছেন ঢাকার কর্মব্যস্ত শহরে, তখনই হয়তো আপনার কনুইতে একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছেন। ডান হোক বা বাম, কনুইয়ের ব্যথা (ডান বা বাম হাতের কনুই ব্যথা দূর করার উপায় এবং কারণ গুলো কি?) দৈনন্দিন জীবনের গতি কমিয়ে দিতে পারে। রান্না করা থেকে শুরু করে টাইপ করা, এমনকি ফোন ধরাও কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু এই ব্যথা কেন হয় এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়ই বা কী? আমাদের আজকের ব্লগে আমরা কনুই ব্যথার কারণ এবং এর থেকে মুক্তির কার্যকর উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

হাতের কনুই ব্যথার কারণ
কনুই জয়েন্টের কাছাকাছি টেন্ডনগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার বা বারবার চাপ পড়লে, এই টিস্যুগুলো ওভারলোড হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যেখানে টেন্ডন হাড়ের সাথে সংযুক্ত থাকে। টেন্ডনের এই অতিরিক্ত চাপের কারণে হাতের কনুই ব্যথার কারণ হিসেবে কনুইয়ের চারপাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে, বিশেষত যখন কেউ কব্জি ও হাত ব্যবহার করেন। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত টেনিস এলবো, গল্ফারস এলবো, বার্সাইটিস, আর্থ্রাইটিস, বা কোনো ধরণের আঘাতের কারণে হতে পারে। এছাড়া, দীর্ঘ সময় ধরে একই ধরনের কাজ করলে বা ভারী জিনিস তুললে কনুইয়ের টিস্যুগুলোতে ক্ষতি হতে পারে, যা হাতের কনুই ব্যথার কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও, হাতের কনুই ব্যথার কারণ হিসেবে আরও বেশ কিছু বিষয় উল্লেখযোগ্য। অনেক সময় টেন্ডন বা টেন্ডনগুলো সংযুক্তকারী টিস্যুর প্রদাহ, যা টেন্ডনাইটিস নামে পরিচিত, কনুইতে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত পুনরাবৃত্তিমূলক নড়াচড়া বা আঘাতের ফলে হয়ে থাকে। এছাড়া, কনুইয়ের আশেপাশে থাকা নার্ভের উপর চাপ পড়লে, যেমন কিউবিটাল টানেল সিন্ড্রোম, হাতের কনুইতে ঝিনঝিন করা, অসাড়তা এবং ব্যথার অনুভূতি হতে পারে। গুরুতর আঘাতের ক্ষেত্রে, যেমন হাড়ের ফাটল বা ভাঙন, হাতের কনুই ব্যথার একটি তাৎক্ষণিক এবং মারাত্মক কারণ হতে পারে, যা তীব্র ব্যথা এবং ফোলা সৃষ্টি করে। কেবল আঘাতজনিত কারণই নয়, কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগও হাতের কনুই ব্যথার কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ডায়াবেটিস স্নায়ু এবং রক্তনালীকে প্রভাবিত করে কনুইতে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। গাউট, যা ইউরিক অ্যাসিড জমার কারণে জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টি করে, কনুইয়ের জয়েন্টেও ব্যথা ঘটাতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি অটোইমিউন রোগ যা জয়েন্টগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং কনুই এর ব্যতিক্রম নয়, যা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং অঙ্গহানি ঘটাতে পারে। তাই, হাতের কনুই ব্যথার কারণ সঠিকভাবে নির্ণয় এবং এর প্রতিকারের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

ডান হাতের কনুই ব্যথার কারণ
ডান হাতের কনুই ব্যথার কারণ বিভিন্ন হতে পারে এবং এর পেছনে বেশ কিছু শারীরিক অবস্থা দায়ী। কনুই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই এতে ব্যথা হলে তা দৈনন্দিন কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
১. আঘাত: কনুই ব্যথার একটি প্রধান কারণ হলো আঘাত। সরাসরি কনুইতে আঘাত লাগলে, যেমন পড়ে গেলে বা কোনো কিছু দিয়ে লেগে গেলে হাড় ভেঙে যেতে পারে, অথবা মাংসপেশি ও লিগামেন্টে চিড় ধরতে পারে। এসব কারণে তীব্র ব্যথা অনুভব হতে পারে, যা নড়াচড়া করতে গেলে আরও বেড়ে যায়।
২. অতিরিক্ত ব্যবহার বা পুনরাবৃত্তিমূলক নড়াচড়া: যারা একই ধরনের কাজ বারবার করেন, যেমন টেনিস বা গলফ খেলোয়াড়, চিত্রশিল্পী, কার্পেন্টার, অথবা যারা কম্পিউটারে দীর্ঘক্ষণ কাজ করেন, তাদের মধ্যে এই ধরনের ব্যথা বেশি দেখা যায়। এর ফলে টেন্ডন বা মাংসপেশির প্রদাহ হতে পারে, যা টেনিস এলবো (ল্যাটেরাল এপিকন্ডাইলাইটিস) বা গলফার্স এলবো (মেডিয়াল এপিকন্ডাইলাইটিস) নামে পরিচিত। টেনিস এলবোতে কনুইয়ের বাইরের দিকে ব্যথা হয়, আর গলফার্স এলবোতে ভেতরের দিকে। এই ব্যথা সাধারণত কার্যকলাপের সময় বাড়ে এবং বিশ্রামে কমে।
৩. আর্থ্রাইটিস: জয়েন্টের প্রদাহজনিত রোগগুলোও কনুই ব্যথার কারণ হতে পারে। অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে জয়েন্টের তরুণাস্থি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ফলে হাড়ে হাড়ে ঘষা লেগে ব্যথা হয়। অন্যদিকে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি অটোইমিউন রোগ যা জয়েন্টের আস্তরণে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে ব্যথা, ফোলাভাব এবং জয়েন্ট শক্ত হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত সকালে বেশি থাকে এবং নড়াচড়ার সাথে কিছুটা উপশম হতে পারে।
৪. টেন্ডিনাইটিস: টেন্ডন হলো সেই টিস্যু যা পেশীকে হাড়ের সাথে সংযুক্ত করে। টেন্ডনে প্রদাহ হলে তাকে টেন্ডিনাইটিস বলে। কনুইয়ের আশেপাশে বিভিন্ন টেন্ডন রয়েছে, এবং সেগুলোর যেকোনোটিতে প্রদাহ হলে তীব্র ব্যথা হতে পারে। অতিরিক্ত ব্যবহার, আঘাত, অথবা হঠাৎ করে কোনো কাজ করার কারণে এই প্রদাহ হতে পারে।
৫. নার্ভ কম্প্রেশন বা স্নায়ুর সমস্যা: কনুইয়ের আশেপাশে বিভিন্ন স্নায়ু রয়েছে, যেমন আলনার নার্ভ। এই স্নায়ুগুলোর উপর চাপ পড়লে ব্যথা, অসাড়তা বা ঝিনঝিন অনুভূতি হতে পারে, যা হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই অবস্থাকে কিউবিটাল টানেল সিন্ড্রোম বলা হয়। ভুল ভঙ্গিতে বসা বা ঘুমানো, অথবা কনুইতে দীর্ঘক্ষণ চাপ পড়ার কারণে এই সমস্যা হতে পারে।
৬. অন্যান্য কারণ: কিছু বিরল ক্ষেত্রে, কনুইয়ের আশেপাশে সিস্ট বা টিউমার তৈরি হলে তা ব্যথার কারণ হতে পারে। এছাড়াও, শরীরের অন্য কোনো অংশে সমস্যা থাকলে, যেমন ঘাড় বা কাঁধের সমস্যা, তা থেকে রেফার্ড পেইন হিসেবে কনুইতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। সংক্রমণ বা কিছু নির্দিষ্ট ধরনের রক্তনালীর রোগও কনুই ব্যথার কারণ হতে পারে।

বাম হাতের কনুই ব্যথার কারণ
বাম হাতের কনুইয়ে ব্যথা অনুভব করা একটি সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে দেখা দিতে পারে। এই ব্যথা হালকা অস্বস্তি থেকে শুরু করে তীব্র যন্ত্রণা পর্যন্ত হতে পারে এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপকে ব্যাহত করতে পারে। বাম হাতের কনুই ব্যথার কারণ নির্ণয় করা এর সঠিক চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আঘাতজনিত কারণ (Traumatic Injuries)
কনুইয়ের ব্যথা প্রায়শই আঘাতের কারণে হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
- পতন বা সরাসরি আঘাত: কনুইতে সরাসরি আঘাত লাগলে বা কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে পড়ে গেলে হাড় ভাঙতে পারে, মাংসপেশি ছিঁড়ে যেতে পারে বা লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- খেলাধুলার আঘাত: টেনিস, গল্ফ, বেসবল বা ব্যাডমিন্টনের মতো খেলাধুলায় পুনরাবৃত্তিমূলক হাতের নড়াচড়ার কারণে কনুইতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এর ফলে টেনিস এলবো (ল্যাটারাল এপিকন্ডাইলাইটিস) বা গল্ফারস এলবো (মিডিয়াল এপিকন্ডাইলাইটিস) হতে পারে, যেখানে কনুইয়ের বাইরের বা ভেতরের অংশের টেন্ডনগুলো ফুলে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অতিরিক্ত ব্যবহার বা পুনরাবৃত্তিমূলক চাপ (Overuse or Repetitive Strain)
দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের কাজ বা নড়াচড়া করার কারণেও কনুইতে ব্যথা হতে পারে। একে রিপিটিটিভ স্ট্রেস ইনজুরি (RSI) বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ:
- পেশাগত কারণ: যারা দীর্ঘক্ষণ ধরে কম্পিউটার ব্যবহার করেন, টাইপ করেন, বা কারখানার শ্রমিক যারা পুনরাবৃত্তিমূলক হাতে কাজ করেন, তাদের মধ্যে এই ধরনের ব্যথা দেখা যায়।
- শখের কাজ: সেলাই, বাগান করা, বা কিছু বাদ্যযন্ত্র বাজানোর মতো শখের কাজও কনুইতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

প্রদাহজনিত কারণ (Inflammatory Conditions)
প্রদাহের কারণেও কনুইতে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- আর্থ্রাইটিস: বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস, যেমন অস্টিওআর্থ্রাইটিস (হাড়ের ক্ষয়জনিত) বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (স্বয়ংক্রিয় প্রতিরোধ ব্যবস্থার ত্রুটিজনিত), কনুইয়ের জোড়ায় প্রদাহ সৃষ্টি করে ব্যথা ঘটাতে পারে।
- বার্সাইটিস: কনুইয়ের হাড়ের উপর অবস্থিত বার্সা নামক তরলপূর্ণ থলিগুলোতে প্রদাহ হলে (বার্সাইটিস) ব্যথা এবং ফোলা হতে পারে।
স্নায়ুজনিত কারণ (Nerve Compression)
কনুইয়ের আশেপাশে থাকা স্নায়ুগুলোর উপর চাপ পড়লে ব্যথা, অসাড়তা বা ঝিনঝিন অনুভূতি হতে পারে।
- কিউবিটাল টানেল সিন্ড্রোম: আলনার্ভ কনুইয়ের ভেতরের দিকে একটি সংকীর্ণ পথে (কিউবিটাল টানেল) সংকুচিত হলে এই অবস্থা হয়। এর ফলে অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙুলে অসাড়তা এবং ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
অন্যান্য কারণ
উপরে উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও, কিছু বিরল ক্ষেত্রে টিউমার, সংক্রমণ, বা রক্তনালীর সমস্যার কারণেও বাম হাতের কনুই ব্যথার কারণ হতে পারে।

হাতের কনুই ব্যথা দূর করার উপায়
হাতের কনুই ব্যথা দূর করার উপায় হিসেবে বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যা ব্যথার তীব্রতা এবং কারণের উপর নির্ভর করে। নিচে কিছু কার্যকর পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
১. বিশ্রাম এবং কার্যকলাপ পরিবর্তন
বিশ্রাম হলো হাতের কনুই ব্যথা দূর করার উপায় হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কনুইয়ের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টিকারী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকুন। উদাহরণস্বরূপ:
- ভারী জিনিস তোলা বা পুনরাবৃত্তিমূলক নড়াচড়া এড়িয়ে চলুন।
- যদি আপনি ক্রীড়াবিদ হন, তবে খেলাধুলার তীব্রতা কমিয়ে দিন বা কিছুদিন বিরতি নিন।
- কম্পিউটারে কাজ করার সময় নিয়মিত বিরতি নিন এবং হাতের অবস্থান পরিবর্তন করুন।
২. বরফ এবং গরম সেঁক
- বরফ সেঁক: ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে বরফ সেঁক অত্যন্ত কার্যকর। দিনে ১৫-২০ মিনিট বরফ প্যাক ব্যবহার করুন। বরফ সরাসরি ত্বকে না লাগিয়ে একটি পাতলা কাপড়ে মুড়ে ব্যবহার করুন।
- গরম সেঁক: যদি কনুইয়ের মাংসপেশী শক্ত হয়ে থাকে বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থাকে, তবে গরম সেঁক ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি মাংসপেশী শিথিল করতে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সহায়ক।

৩. ফিজিওথেরাপি এবং ব্যায়াম
ফিজিওথেরাপি হাতের কনুই ব্যথা দূর করার উপায় হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর। একজন ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে নিম্নলিখিত ব্যায়াম করা যেতে পারে:
- কনুইয়ের মাংসপেশী শক্তিশালীকরণ: কনুইয়ের চারপাশের মাংসপেশী শক্তিশালী করতে হালকা ওজন বা রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যবহার করুন।
- স্ট্রেচিং ব্যায়াম: কনুই এবং কব্জির স্ট্রেচিং ব্যায়াম গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- ম্যাসাজ থেরাপি: ম্যাসাজ মাংসপেশীর শক্ততা কমাতে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে।
৪. ব্যথানাশক ওষুধ
ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, এই ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ সেবনের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, তাই চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলুন।

৫. কনুই সাপোর্ট এবং ব্রেস
কনুই সাপোর্ট বা ব্রেস ব্যবহার হাতের কনুই ব্যথা দূর করার উপায় হিসেবে কার্যকর। এটি কনুইয়ের উপর চাপ কমায় এবং জয়েন্টকে স্থিতিশীল রাখে। বিশেষ করে টেনিস এলবো বা গলফার্স এলবোর ক্ষেত্রে ব্রেস ব্যবহার উপকারী।
৬. সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা
কাজের সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা হাতের কনুই ব্যথা দূর করার উপায় হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে:
- কম্পিউটারে কাজ করার সময় কনুই ৯০ ডিগ্রি কোণে রাখুন।
- কীবোর্ড এবং মাউস ব্যবহারের সময় হাতের অবস্থান স্বাভাবিক রাখুন।
- দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থানে বসে থাকা এড়িয়ে চলুন।
৭. চিকিৎসকের পরামর্শ
যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হয়, তবে অবিলম্বে একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক ব্যথার কারণ নির্ণয়ের জন্য এক্স-রে, এমআরআই, বা আল্ট্রাসাউন্ডের মতো পরীক্ষা করতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে, টেন্ডিনাইটিস, বার্সাইটিস, বা ফ্র্যাকচারের মতো গুরুতর সমস্যা থাকতে পারে, যার জন্য বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন।

৮. বিকল্প চিকিৎসা
কিছু ক্ষেত্রে, হাতের কনুই ব্যথা দূর করার উপায় হিসেবে বিকল্প চিকিৎসা কার্যকর হতে পারে:
- আকুপাংচার: এটি ব্যথা কমাতে এবং শরীরের প্রাকৃতিক নিরাময় প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করতে সহায়ক।
- কাইরোপ্রাকটিক চিকিৎসা: কনুইয়ের জয়েন্ট এবং মাংসপেশীর সঠিক সারিবদ্ধতা নিশ্চিত করতে এই চিকিৎসা ব্যবহার করা যেতে পারে।
হাতের কনুই ব্যথা প্রতিরোধের উপায়
হাতের কনুই ব্যথা দূর করার উপায় ছাড়াও, এটি প্রতিরোধ করা সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা উল্লেখ করা হলো:
- নিয়মিত ব্যায়াম: কনুইয়ের চারপাশের মাংসপেশী শক্তিশালী করতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- ওয়ার্ম-আপ এবং স্ট্রেচিং: খেলাধুলা বা শারীরিক কাজের আগে ওয়ার্ম-আপ এবং স্ট্রেচিং করুন।
- অর্গোনমিক সরঞ্জাম: কম্পিউটারে কাজ করার সময় অর্গোনমিক কীবোর্ড এবং চেয়ার ব্যবহার করুন।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কনুইয়ের উপর চাপ বাড়াতে পারে, তাই সুস্থ ওজন বজায় রাখুন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- ব্যথা কয়েক সপ্তাহ ধরে কমছে না।
- কনুইয়ে তীব্র ফোলাভাব বা লালভাব।
- হাত বা বাহুতে দুর্বলতা বা অসাড়তা।
- জয়েন্টের গতিশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া।
- জ্বর বা অন্যান্য সিস্টেমিক লক্ষণ।
শেষ কথা (হাতের কনুই ব্যথা দূর করার উপায়)
হাতের কনুই ব্যথা দূর করার উপায় হিসেবে বিশ্রাম, বরফ সেঁক, ফিজিওথেরাপি, এবং সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা অত্যন্ত কার্যকর। তবে, ব্যথার কারণ এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সচেতনতার মাধ্যমে হাতের কনুই ব্যথার ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক ভঙ্গি, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে আপনি কনুইয়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারেন।
যেকোনো পরামর্শ পেতে – উত্তরা- +8801727177436 এবং বনানী- +8801774678604 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ পেইন কিউর
বিস্তারিত জানুন: সাইনাসের ব্যথা কমানোর উপায়- সাইনাসের মাথা ব্যথা কি কমে?
বিস্তারিত জানুন: ডায়াবেটিস হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়
বিস্তারিত জানুন: সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি
বিস্তারিত জানুন: গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা এবং কাঁধে ব্যথা চিকিত্সা
সাধারণ জিজ্ঞাসা
মানসিক চাপের কারণে কি কনুই ব্যথা হতে পারে?
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা শুধু বাহুতে নয়, শরীরের অন্যান্য অংশেও ব্যথার কারণ হতে পারে। অর্থাৎ, মানসিক চাপ আপনার শারীরিক ব্যথাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এছাড়াও, কাঁধ, কনুই, কব্জি এবং হাত – এই জায়গাগুলোতে বিভিন্ন কারণে চাপ বা আঘাত লাগলে বাহুতে ব্যথা অনুভব করা অস্বাভাবিক নয়।
হাতের কনুই ও হাতের মধ্যে পার্থক্য কি?
আপনার বাহু কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অংশটিকে প্রধানত দুটো ভাগে ভাগ করা যায়:
- সামনের অংশ (ফ্লেক্সর বগি): এই অংশের পেশীগুলো সাধারণত বাহু বাঁকাতে সাহায্য করে।
- পেছনের অংশ (এক্সটেনসর বগি): এই অংশের পেশীগুলো বাহু সোজা করতে সাহায্য করে।
বাহুর বেশিরভাগ পেশীই একে অপরের সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত। এগুলি কনুইয়ের কাছাকাছি থেকে শুরু হয়ে আঙুলের ডগা পর্যন্ত প্রসারিত।

Dr. Saiful Islam, PT, is a Consultant Physiotherapist with expertise in Orthopedics. He holds a BPT from Dhaka University, an MPT, and a Postgraduate Certification in Acupuncture from India, with specialized training in Ozone Therapy. (Best physiotherapist in Dhaka)



