টেনিস এলবো রোগ কি, গলফার এলবো কী, কেন হয় এবং চিকিৎসা

টেনিস এলবো রোগ কি, গলফার এলবো কী, কেন হয় এবং চিকিৎসা

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হাতের ব্যবহার অপরিহার্য। লেখালেখি থেকে শুরু করে খেলাধুলা পর্যন্ত, হাতের প্রতিটি নড়াচড়াই আমাদের জীবনকে সচল রাখে। কিন্তু কখনো কখনো হাতের কনুইয়ের আশেপাশে এমন এক ব্যথা শুরু হয় যা আমাদের স্বাভাবিক কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটায়। এই ব্যথাগুলোই সাধারণত ‘টেনিস এলবো’ (Tennis Elbow) এবং ‘গলফার এলবো’ (Golfer’s Elbow) নামে পরিচিত। নাম শুনে মনে হতে পারে যে এই রোগগুলো বুঝি শুধু টেনিস বা গলফ খেলোয়াড়দেরই হয়, কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। যে কেউই এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।

আজকের ব্লগে আমরা টেনিস এলবো রোগ কি, গলফার এলবো কী, কেন হয় এবং এর থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি কী ধরনের রয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যদি আপনিও কনুইয়ের ব্যথায় ভুগছেন অথবা এই রোগগুলো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন, তবে এই ব্লগটি আপনার জন্য।

গলফার এলবো কী

গলফার এলবো কী?

গলফার এলবো (Golfer’s Elbow) একটি অত্যন্ত সাধারণ পেশীগত সমস্যা যা বিশেষ করে ক্রীড়াবিদ এবং নিয়মিত শারীরিক কাজ করে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। এমন একটি ব্যাধি যেখানে কনুইয়ের অভ্যন্তরীণ অংশে ব্যাথা এবং অস্বস্তি অনুভূত হয়। গলফার এলবো এমন একটি ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা যেখানে কনুইয়ের অভ্যন্তরীণ টেন্ডন গুলোতে ক্ষয়ক্ষতি ঘটে, যার ফলে হাত এবং কনুইয়ে ব্যাথা, শক্তিহীনতা এবং অস্বস্তি অনুভূত হয়। ব্যাডমিন্টন, টেনিস এবং গলফ খেলোয়াড়দের মধ্যে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়, কিন্তু অন্যান্য পুনরাবৃত্তিমূলক হাতের কাজ করে এমন ব্যক্তিদেরও এই সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।

গলফারস এলবোর উপসর্গ

গলফারস এলবোর উপসর্গ

মিডিয়াল এপিকন্ডাইলাইটিস হঠাৎ করে দেখা দিতে পারে, আবার ধীরে ধীরে উপসর্গগুলোও বাড়তে পারে। এর লক্ষণ হালকা থেকে শুরু করে অনেক গুরুতরও হতে পারে। যদি আপনার গলফারস এলবো থাকে, তবে আপনি নিচের যেকোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ অনুভব করতে পারেন:

  • কনুইয়ের ভিতরে দিকে ব্যথা: এটি গলফারস এলবোর সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। ব্যথা সাধারণত কনুইয়ের ভেতরের হাড়ের অংশে শুরু হয় এবং কখনো কখনো হাতের নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
  • কনুই এ দৃঢ়তা অনুভব হওয়া: আপনি কনুইয়ের চারপাশে শক্ত বা জড়তার অনুভূতি পেতে পারেন, যা নড়াচড়ার সময় আরও বেড়ে যায়।
  • হাত এবং কব্জিতে দুর্বলতা: গলফারস এলবোর কারণে আপনার হাতে জিনিস ধরতে বা কব্জি নাড়াতে অসুবিধা হতে পারে।
  • আঙ্গুলে, বিশেষ করে অনামিকা এবং কনিষ্ঠা আঙ্গুলের মধ্যে শিহরণ বা অসাড়তা: এটি স্নায়ুর উপর চাপ পড়ার কারণে হতে পারে।
  • কনুই নাড়াতে অসুবিধা: কনুই বাঁকানো বা সোজা করার সময় ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব হতে পারে।

কনুইয়ের ব্যথা হাত থেকে কব্জি পর্যন্ত চলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এটি দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপগুলো সম্পূর্ণ করা কঠিন করে তোলে, যেমন জিনিসপত্র তোলা, দরজা খোলা বা হ্যান্ডশেক করা ইত্যাদি। সাধারণত, আপনি স্বাভাবিক কাজকর্মের সময় যে হাত বেশি ব্যবহার করে থাকেন, মানে আপনার ডমিনেন্ট আর্ম যেটা, মিডিয়াল এপিকন্ডাইলাইটিস সেই হাতেই বেশি হয়ে থাকে।

টেনিস এলবো রোগ কি

টেনিস এলবো রোগ কি?

টেনিস এলবো রোগ কি? এটি একটি মেডিকেল অবস্থা, যা ল্যাটারাল এপিকন্ডাইলাইটিস নামেও পরিচিত। এটি ঘটে যখন কনুইয়ের বাইরের অংশে অবস্থিত টেন্ডনগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং সেগুলোতে প্রদাহ বা ক্ষতি হয়। এই টেন্ডনগুলো হাতের কব্জি এবং আঙুলের নড়াচড়ার জন্য দায়ী পেশীগুলোকে হাড়ের সাথে সংযুক্ত করে। যখন এই টেন্ডনগুলো অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কনুইয়ের চারপাশে ব্যথা এবং দুর্বলতা অনুভূত হয়।

টেনিস এলবো সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এটি শুধুমাত্র খেলোয়াড়দের নয়, বরং যারা পুনরাবৃত্তিমূলক কাজে জড়িত, যেমন প্লাম্বার, ছুতার, বা এমনকি অফিস কর্মী, তাদের মধ্যেও হতে পারে।

টেনিস এলবো কেন হয়

টেনিস এলবো কেন হয়?

টেনিস এলবো কেন হয়, এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন যা অনেকের মনে উঠে, বিশেষ করে যারা বাহুতে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করেন। টেনিস এলবো, যা চিকিৎসা পরিভাষায় ল্যাটারাল এপিকন্ডাইলাইটিস নামে পরিচিত, মূলত কনুইয়ের বাইরের অংশে অবস্থিত টেন্ডনগুলোর প্রদাহ বা ক্ষতির কারণে হয়। টেনিস এলবো কেন হয়, তার প্রধান কারণ হলো বারবার একই ধরনের নড়াচড়া বা অতিরিক্ত চাপ, যা কনুইয়ের টেন্ডনগুলোর উপর প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, টেনিস খেলোয়াড়রা যখন বারবার র‍্যাকেট দিয়ে বল মারেন, তখন তাদের কনুইয়ের টেন্ডনগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা টেনিস এলবো কেন হয় তার একটি বড় কারণ। তবে শুধু টেনিস খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেই এটি সীমাবদ্ধ নয়, যারা নিয়মিত ভারী জিনিস তুলেন, প্লাম্বার, ছুতোর, এমনকি অফিসে কম্পিউটারে দীর্ঘ সময় কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রেও টেনিস এলবো কেন হয় তা বোঝা যায়। এই ধরনের পুনরাবৃত্তিমূলক কাজের ফলে টেন্ডনগুলোতে মাইক্রোটিয়ার বা ছোট ছোট ছিঁড়ে যাওয়া দেখা দেয়, যা সময়ের সাথে সাথে প্রদাহে রূপ নেয়।

টেনিস এলবো কেন হয়, এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ভুল কৌশল বা সরঞ্জামের ব্যবহার। উদাহরণস্বরূপ, টেনিস খেলার সময় যদি কেউ ভুলভাবে র‍্যাকেট ধরেন বা অতিরিক্ত টাইট গ্রিপ ব্যবহার করেন, তাহলে কনুইয়ের টেন্ডনগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা টেনিস এলবো কেন হয় তার একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, যারা নিয়মিত ভারী যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম ব্যবহার করেন, যেমন হাতুড়ি বা স্ক্রু ড্রাইভার, তাদের ক্ষেত্রেও টেনিস এলবো কেন হয় তা বোঝা যায়। এই ধরনের কাজের সময় হাতের পেশী এবং টেন্ডনের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা সময়ের সাথে সাথে টেনিস এলবোর কারণ হয়ে ওঠে। টেনিস এলবো কেন হয়, এর পেছনে বয়সও একটি বড় ভূমিকা পালন করে। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়, কারণ এই সময়ে টেন্ডনগুলোর স্থিতিস্থাপকতা কমতে শুরু করে। এছাড়া, শারীরিক ফিটনেসের অভাবও টেনিস এলবো কেন হয় তার একটি বড় কারণ হতে পারে, কারণ দুর্বল পেশী টেন্ডনের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

টেনিস এলবো কেন হয়, তা প্রতিরোধ করতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। টেনিস এলবো কেন হয়, তার পেছনে যেহেতু পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ এবং অতিরিক্ত চাপ প্রধান ভূমিকা পালন করে, তাই সঠিক কৌশল ব্যবহার করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টেনিস এলবো কেন হয়, তা জানা থাকলে আমরা সচেতনভাবে এটি প্রতিরোধ করতে পারি এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারি। যদি কারো টেনিস এলবোর লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন কনুইয়ের বাইরের অংশে ব্যথা বা দুর্বলতা, তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং ফিজিওথেরাপি গ্রহণ করা উচিত। টেনিস এলবো কেন হয়, এর কারণগুলো বোঝার মাধ্যমে আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি এবং আমাদের কাজের দক্ষতা বজায় রাখতে পারি।

টেনিস এলবো চিকিৎসা বা ট্রিটমেন্ট

টেনিস এলবো চিকিৎসা বা ট্রিটমেন্ট

টেনিস এলবো (Lateral Epicondylitis) একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা, যার সঠিক চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি। এ অবস্থায় সাধারণত বিশ্রাম, বরফ প্রয়োগ, ব্যথানাশক ওষুধ সেবন এবং পুনর্বাসনের জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে, ইনজেকশন বা অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হতে পারে, যদি অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি কাজ না করে। টেনিস এলবো চিকিৎসা বা ট্রিটমেন্ট-এর জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:

বিশ্রাম

টেনিস এলবোর জন্য দায়ী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকুন, যা কনুইয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে। কনুইয়ের জয়েন্টকে বিশ্রাম দিন এবং অতিরিক্ত নড়াচড়া করা থেকে বিরত থাকুন।

বরফ থেরাপি

দিনে কয়েকবার কনুইতে বরফ লাগান। সরাসরি ত্বকে বরফ না লাগিয়ে একটি পাতলা কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে বরফ ব্যবহার করুন।

পুনর্বাসনমূলক ব্যায়াম

একজন ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে কনুই এবং বাহুর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম করা যেতে পারে। এই ব্যায়ামগুলো কনুইয়ের নমনীয়তা এবং শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

কাউন্টারফোর্স ব্রেস

কনুইয়ের চারপাশে একটি ব্রেস পরলে কনুইয়ের পেশী এবং টেন্ডনের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে।

টেনিস এলবো চিকিৎসা বা ট্রিটমেন্ট ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, তাই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে ভালো। পেইন কিউর (Pain Cure) একটি আধুনিক ও বিশ্বস্ত পেইন ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, যেখানে টেনিস এলবো চিকিৎসা বা ট্রিটমেন্ট-এর জন্য ফিজিওথেরাপি সংক্রান্ত উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

 

যেকোনো পরামর্শ পেতে – উত্তরা- +8801727177436 এবং বনানী- +8801774678604  (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ পেইন কিউর

 

বিস্তারিত জানুন: গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা এবং কাঁধে ব্যথা চিকিত্সা

বিস্তারিত জানুন: হাতের কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

বিস্তারিত জানুন: ডান বা বাম হাতের কনুই ব্যথা দূর করার উপায় এবং কারণ গুলো কি?

বিস্তারিত জানুন: সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি

 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

মিডিয়াল এপিকন্ডাইলাইটিস কী? মিডিয়াল এপিকন্ডাইলাইটিসকে গল্ফারের কনুই, বেসবল কনুই, স্যুটকেস কনুই বা ফোরহ্যান্ড টেনিস কনুই নামেও ডাকা হয়। এটি কনুইয়ের ভিতরের অংশে (মাঝারি দিকে) কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত ব্যথার মাধ্যমে চিহ্নিত হয়। এই ব্যথার কারণ হলো কনুইকে তালুর দিকে বাঁকানোর জন্য দায়ী টেন্ডনের ক্ষতি।

স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা পরামর্শ দেন যে, আপনার হাতকে কমপক্ষে চার থেকে ছয় সপ্তাহ বিশ্রামে রাখুন, এরপর খেলাধুলা শুরু করুন অথবা এমন দৈনন্দিন কাজকর্ম পুনরায় শুরু করুন যা আপনার বাহুতে চাপ সৃষ্টি করে।

১. অতিরিক্ত বা পুনরাবৃত্তিমূলক নড়াচড়া এড়িয়ে চলুন: এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন যা কনুইয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যেমন বারবার শক্ত করে ধরা বা জোরে দোলানো।

২. ব্যথাকে অবহেলা করবেন না: আপনার শরীরের সংকেতের প্রতি মনোযোগ দিন। ব্যথা অনুভব করলে জোর করে কাজ চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অবিরাম তীব্র কার্যকলাপ নিরাময় প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *