পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় ও পায়ের গোড়ালি ব্যথা করে কেন

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় ও পায়ের গোড়ালি ব্যথা করে কেন?

পায়ের গোড়ালি ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেকের জীবনকে প্রভাবিত করে। পায়ের গোড়ালি ব্যথা করে কেন এবং পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় জানা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে। আজকের এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা, পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে। যদি আপনি পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় খুঁজছেন, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্যই। চলুন শুরু করি।

পায়ের গোড়ালি ব্যথা করে কেন

পায়ের গোড়ালি ব্যথা করে কেন?

পায়ের গোড়ালি ব্যথা করে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া অনেকের জন্যই জরুরি। পায়ের গোড়ালি আমাদের শরীরের একটি জটিল জয়েন্ট, যা তিনটি হাড়, পেশী, টেন্ডন এবং লিগামেন্ট দিয়ে গঠিত। এটি আমাদের ওজন বহন করে এবং চলাফেরায় সাহায্য করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে পায়ের গোড়ালি ব্যথা করে কেন এবং এটি হঠাৎ শুরু হয়ে যায়। প্রথমত, আঘাত বা ইনজুরি হলো সবচেয়ে সাধারণ কারণ। উদাহরণস্বরূপ, গোড়ালি মচকানো বা স্প্রেইন হলে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়, যা তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে। পায়ের গোড়ালি ব্যথা কেন এমন হয়? কারণ এই স্প্রেইনের ক্ষেত্রে ফোলা এবং লালভাব দেখা দেয়, এবং ওজন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

আরেকটি কারণ হলো অ্যারথ্রাইটিস। অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা ওয়্যার অ্যান্ড টিয়ারের ফলে জয়েন্টের কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে যায়, যা পায়ের গোড়ালি ব্যথার একটি প্রধান কারণ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটি বাড়তে থাকে, বিশেষ করে ৫০ বছরের উপরে। গাউট বা সিউটিক অ্যারথ্রাইটিসও পায়ের গোড়ালি ব্যথার জন্য দায়ী, যেখানে ইউরিক অ্যাসিডের ক্রিস্টাল জয়েন্টে জমে যায় এবং তীব্র ব্যথা হয়। পায়ের গোড়ালি ব্যথা এমন অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে টেন্ডিনাইটিস, যেমন পেরোনিয়াল টেন্ডিনাইটিস যা গোড়ালির বাইরের দিকে ব্যথা করে, অথবা পোস্টিরিয়র টিবিয়াল টেন্ডিনাইটিস যা ভিতরের দিকে প্রভাব ফেলে।

ওভারইউজ বা অতিরিক্ত ব্যবহারও পায়ের গোড়ালি ব্যথা করে এর একটি কারণ। যেমন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা, দৌড়ানো বা ভারী জিনিস তোলা। এতে পেশী এবং টেন্ডন চাপে পড়ে এবং প্রদাহ হয়। নার্ভ ড্যামেজ বা বার্সাইটিসও পায়ের গোড়ালি ব্যথা এর অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, ডায়াবেটিসের কারণে নার্ভের ক্ষতি হলে ব্যথা শুরু হয়। পায়ের গোড়ালি ব্যথা করে কেন জানলে আমরা প্রতিরোধ করতে পারি। সিম্পটমস হিসেবে ফোলা, লালভাব, স্টিফনেস এবং ওজন দেওয়ার অক্ষমতা দেখা দেয়। যদি পায়ের গোড়ালি ব্যথা যদি বুঝতে না পারেন, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। 

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায়

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায়

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় অনেকগুলো, এবং এগুলো জানলে আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন। প্রথম এবং সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো RICE পদ্ধতি। RICE মানে Rest (বিশ্রাম), Ice (বরফ), Compression (চাপ) এবং Elevation (উঁচু করা)। পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে Rest নেওয়া মানে আঘাতের পর গোড়ালিতে ওজন না দেওয়া। ক্রাচ বা ক্যান ব্যবহার করুন এবং ২-৩ দিন বিশ্রাম নিন। Ice এর জন্য বরফের প্যাক ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন, দিনে ৩-৫ বার। এতে ফোলা কমে এবং ব্যথা নামে।

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় এর মধ্যে Compression গুরুত্বপূর্ণ। এলাস্টিক ব্যান্ডেজ দিয়ে গোড়ালি বেঁধে ফেলুন, কিন্তু খুব টাইট না করে যাতে রক্ত চলাচল না বন্ধ হয়। Elevation এ গোড়ালি হার্টের উপরে রাখুন, যেমন বালিশের উপর। এই পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় গুলো প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় ব্যবহার করলে অসাধারণ ফল পাওয়া যায়। আরও পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় হলো ওভার-দ্য-কাউন্টার পেইন রিলিভার, যেমন আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসিটামিনোফেন। এগুলো প্রদাহ কমায় এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করে।

ফিজিক্যাল থেরাপি পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে খুবই কার্যকর। থেরাপিস্টের নির্দেশে স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করুন, যেমন গোড়ালি ঘুরানো বা আপ-ডাউন ফ্লেক্স। এতে ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ে এবং শক্তি ফিরে আসে। পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় এর জন্য অর্থোটিক ইনসার্ট বা ভালো জুতো ব্যবহার করুন। এগুলো ওজন ডিস্ট্রিবিউট করে ব্যথা কমায়। যদি ব্যথা অ্যারথ্রাইটিস থেকে হয়, তাহলে ওজন কমানো এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েট পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত ওয়াকিং বা সুইমিংও সাহায্য করে।

প্রতিরোধের জন্য পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় হলো ওয়ার্ম-আপ এবং স্ট্রেচিং। স্পোর্টসের আগে সঠিক জুতো পরুন এবং ক্লাটার-ফ্রি এনভায়রনমেন্ট রাখুন। এই পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় গুলো অনুসরণ করলে দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা পাবেন। যদি ব্যথা না কমে, তাহলে পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা নিন।

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সহজ এবং কার্যকর, যা বাড়িতেই করা যায়। প্রথমত, RICE পদ্ধতি যা আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তা পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে সেরা। বরফের পর হিট থেরাপি ব্যবহার করুন গরম পানির ব্যাগ ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন, যাতে রক্ত চলাচল বাড়ে। পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে এপসম সল্ট বাথ অন্তর্ভুক্ত। গরম পানিতে এপসম সল্ট মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন। এতে ম্যাগনেসিয়াম শোষিত হয় এবং প্রদাহ কমে।

হার্বাল সল্যুশন পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে কাজ করে। আলুর রস বা হলুদের পেস্ট লাগান হলুদে কার্কুমিন থাকে যা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি। পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় এর জন্য স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করুন, বসে পায়ের আঙ্গুল টেনে ধরুন বা গোড়ালি ঘুরান। দিনে ১০-১৫ মিনিট করলে ব্যথা কমবে। অ্যাসপারাগাস বা অ্যাডেলওয়াইড চা পান করুন, যা প্রদাহ কমায়।

পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে ম্যাসাজও দারুণ। অলিভ অয়েল দিয়ে মালিশ করুন। ওজন কমানো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়। ফল-সবজি, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খান। এই পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো নিয়মিত করলে ডাক্তারের দরকার পড়বে না।

পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা

পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা

পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে যান, বিশেষত যদি ব্যথা ৩-৪ দিনের বেশি থাকে, তাহলে এটি গুরুতর হতে পারে। পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসার প্রথম ধাপ হলো সঠিক ডায়াগনোসিস, যেখানে এক্স-রে বা এমআরআই করে ব্যথার কারণ বোঝা হয়। পেইন কিউর (Pain Cure) একটি আধুনিক ও বিশ্বস্ত পেইন ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, যেখানে নানা ধরনের শারীরিক ব্যথার জন্য উন্নত ও এডভান্স চিকিৎসা প্রদান করা হয়। চিকিৎসা হিসেবে NSAIDs যেমন ইবুপ্রোফেন প্রেসক্রাইব করা হয়, এবং ব্রেস বা স্প্লিন্ট ব্যবহার করে গোড়ালি স্থিতিশীল রাখা হয়। ফিজিক্যাল থেরাপি পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসার মূল চিকিৎসা, যেখানে পেইন কিউরে ওজোন থেরাপি, ওজোন সওনা, ইলেক্ট্রো আকুপাংচার, আর-টি-এম-এস থেরাপি, ম্যানুয়াল ফিজিওথেরাপি, টেকার থেরাপি, ক্রায়ো থেরাপি, শকওয়েভ থেরাপিপালস ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি (PEMF) এর মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রয়োজনে স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রদাহ কমায়, যা ৩-৬ মাস সুবিধা দেয়, এবং জয়েন্ট অ্যাসপিরেশন করা হয় ফ্লুইড অপসারণের জন্য। অর্থোটিক ইনসার্টও পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যদি সেপটিক আরথ্রাইটিস হয়, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার হয়। পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসার শেষ অপশন হিসেবে সার্জারি, যেমন অ্যাঙ্কেল আরথ্রোস্কোপি বা ফিউশন করা হতে পারে। পেইন কিউরে ঘরোয়া ব্যায়াম, ব্যথা প্রতিরোধে পরামর্শ এবং চিকিৎসকদের মতামতও তুলে ধরা হয়। পেইন কিউরের লক্ষ্য হল সবার কাছে ব্যথামুক্ত, সুস্থ ও সচেতন জীবনযাপনের বার্তা পৌঁছে দেওয়া, এবং পায়ের গোড়ালি ব্যথার চিকিৎসা নিয়মিত ফলো-আপ নেওয়া।

 

উত্তরা বা বনানী শাখায় অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য সকাল ৯:০০ থেকে রাত ৯:০০ পর্যন্ত +৮৮০১৭৭৪৬৭৮৬০৪ নম্বরে কল করুন।

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ পেইন কিউর

 

বিস্তারিত জানুন: হাটুর ব্যাথা সারানোর খাবার (প্রাকৃতিক উপায়ে স্থায়ী মুক্তি)

বিস্তারিত জানুন: পায়ের হাঁটু ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানুন!!

বিস্তারিত জানুন: হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় এবং এই ব্যথা কেন হয়?

বিস্তারিত জানুন: পায়ের লিগামেন্ট ইনজুরি থেকে সেরে ওঠার উপায় ও এটির লক্ষণ কি?

 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

পায়ের গোড়ালি ব্যথার জন্য প্রথমে অর্থোপেডিক সার্জন বা অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা জটিল হয়, তাহলে পেইন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ বা ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যেতে পারেন। স্পোর্টস ইনজুরি বা লিগামেন্ট সমস্যার ক্ষেত্রে স্পোর্টস মেডিসিন স্পেশালিস্ট এবং আর্থ্রাইটিস জনিত সমস্যার জন্য রিউমাটোলজিস্ট দেখানো যেতে পারে।

ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিও হাড় ও পেশীর সমস্যা সৃষ্টি করে গোড়ালি ব্যথার কারণ হয়। এছাড়া ভিটামিন বি১২ এর অভাবে স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিয়ে পায়ে ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।

গোড়ালির লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র ব্যথা, দ্রুত ফোলা এবং আক্রান্ত স্থানে নীল বা কালো দাগ পড়া। হাঁটতে বা ওজন দিতে অসুবিধা হয়, গোড়ালি নড়াচড়া করলে ব্যথা বাড়ে এবং জয়েন্ট অস্থিতিশীল মনে হয়। অনেক সময় আঘাতের মুহূর্তে "পপ" বা "ক্র্যাক" শব্দ শোনা যায় এবং স্পর্শ করলে গোড়ালি খুব সংবেদনশীল লাগে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *