গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা এবং কাঁধে ব্যথা চিকিত্সা

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা এবং কাঁধে ব্যথা চিকিত্সা

Table of Contents

গর্ভাবস্থা প্রতিটি নারীর জীবনে এক অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময় শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে, যার মধ্যে অন্যতম হলো কাঁধে ব্যথা। অনেক গর্ভবতী মা এই সমস্যার মুখোমুখি হন এবং এটি কখনো কখনো উদ্বেগের কারণও হয়ে দাঁড়ায়। এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা কেন হয়, এর লক্ষণ, কারণ, ঝুঁকি, প্রতিকার ও কাঁধে ব্যথা চিকিত্সা সম্পর্কে। পাশাপাশি থাকবে কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা ও মানবিক স্পর্শ, যাতে আপনি নিজেকে একা না ভাবেন।

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা কতটা সাধারণ

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা কতটা সাধারণ?

গবেষণা ও অভিজ্ঞতা বলছে, প্রায় ৪০% গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা অনুভব করেন। এটি সাধারণত হরমোনাল পরিবর্তন, শরীরের ওজন বৃদ্ধি, ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তন, ও দৈনন্দিন কাজের কারণে হয়ে থাকে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি গুরুতর কিছু নয়, তবে কখনো কখনো এটি অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথার কারণসমূহ

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথার কারণসমূহ

গর্ভাবস্থায় শরীরে নানান পরিবর্তন আসে, যার অনেকগুলোই কাঁধে ব্যথার কারণ হতে পারে। এই ব্যথা হালকা অস্বস্তি থেকে শুরু করে তীব্র সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। নিচে এর কিছু প্রধান কারণ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো –

১. শরীরের ওজন ও মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্রের পরিবর্তন

গর্ভধারণের সাথে সাথে আপনার শরীরের মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র (Center of Gravity) ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে থাকে। ক্রমবর্ধমান জরায়ু এবং পেটের ওজন সামনের দিকে বাড়ার কারণে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে আপনার মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবেই আপনার ভঙ্গি বা পোস্টার (Posture) পরিবর্তন করে। এই পরিবর্তিত ভঙ্গি প্রায়শই কাঁধ, ঘাড় এবং উপরের পিঠের পেশী ও জয়েন্টগুলিতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। অনেক গর্ভবতী মায়ের পেটের ওজন বাড়ার সাথে সাথে কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে যায়, যাকে আমরা রাউন্ডেড শোল্ডারস বলি। এতে কাঁধের সামনের পেশীগুলো ছোট ও শক্ত হয়ে যায়, আর পেছনের পেশীগুলো দুর্বল ও লম্বাটে হয়ে পড়ে। এর ফলে পেশীতে টান লাগতে পারে বা ব্যথা হতে পারে। এই চাপ দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে তা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণ হতে পারে।

হরমোনাল পরিবর্তন

২. হরমোনাল পরিবর্তন

গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক থেকে রিল্যাক্সিন (Relaxin) নামক হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এই হরমোনের প্রধান কাজ হলো শরীরের লিগামেন্টগুলোকে (Ligaments) শিথিল করা, যাতে প্রসবের সময় পেলভিস বা শ্রোণীচক্রের হাড়গুলো প্রসারিত হতে পারে। তবে রিল্যাক্সিন শুধু পেলভিসের লিগামেন্টগুলোকেই প্রভাবিত করে না, এটি শরীরের অন্যান্য লিগামেন্ট, যেমন কাঁধের লিগামেন্টগুলোকেও আলগা করে দিতে পারে। লিগামেন্টগুলো আলগা হয়ে গেলে জয়েন্টগুলো কিছুটা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, যার ফলে কাঁধে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। এই শিথিলতা জয়েন্টগুলোকে আঘাতের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে।

৩. ভঙ্গিমার পরিবর্তন

গর্ভকালীন সময়ে স্তনের আকার বৃদ্ধি এবং পেটের ক্রমবর্ধমান ওজন স্বাভাবিক ভঙ্গিকে ব্যাহত করে। আগে যেখানে সোজা হয়ে হাঁটার অভ্যাস ছিল, এখন তা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য অজান্তেই কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে আসে এবং পিঠের উপরের অংশ কিছুটা কুঁজো হয়ে যেতে পারে। এই পরিবর্তিত ভঙ্গি কাঁধের জয়েন্ট এবং আশেপাশের পেশীগুলিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। কাঁধের এই সামনের দিকে ঝুঁকে যাওয়া পেশীগুলির ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ব্যথার কারণ হয়। সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখার জন্য সচেতন প্রচেষ্টা এবং প্রয়োজনে শারীরিক থেরাপির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

৪. ঘুমের ভঙ্গি ও সাপোর্টের অভাব

গর্ভাবস্থায় আরামদায়ক ঘুমের ভঙ্গি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। অনেকেই একপাশে শুয়ে ঘুমাতে পছন্দ করেন, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ একই পাশে শুয়ে থাকার কারণে কাঁধে অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, বিশেষ করে যদি সঠিক সাপোর্ট যেমন গর্ভাবস্থার বালিশ (Pregnancy Pillow) ব্যবহার না করা হয়। ভুল বালিশ ব্যবহার করলে ঘাড় এবং কাঁধের অ্যালাইনমেন্ট (Alignment) ঠিক থাকে না, যা কাঁধে ব্যথার কারণ হতে পারে। শরীরের ওজনের সাথে সাথে জয়েন্টগুলিতে চাপ পড়ে এবং রক্ত ​​চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

চোট বা ভারী কাজ

৫. চোট বা ভারী কাজ

গর্ভাবস্থায় শরীরের ভারসাম্য কিছুটা পরিবর্তিত হয়, যার কারণে পড়ে যাওয়ার বা হোঁচট খাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অসাবধানতাবশত পড়ে গেলে কাঁধে আঘাত লাগতে পারে, যা লিগামেন্ট বা পেশীতে টান সৃষ্টি করে ব্যথার কারণ হতে পারে। এছাড়াও, এই সময়ে ভারী জিনিস তোলা বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত নয়, কারণ এতে কাঁধের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে। পেশী বা জয়েন্টে আগে থেকে থাকা কোনো দুর্বলতা থাকলে তা এই সময়ে আরও বেড়ে যেতে পারে।

৬. গোলাকার লিগামেন্টের ব্যথা

গোলাকার লিগামেন্ট (Round Ligament) জরায়ুকে সাপোর্ট দেয়। গর্ভাবস্থায় জরায়ু বাড়ার সাথে সাথে এই লিগামেন্টগুলো প্রসারিত হয়। সাধারণত, এই ব্যথা তলপেটে অনুভূত হয়, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি শরীরের উপরের দিকে বা কাঁধের দিকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ব্যথা ধারালো এবং ছুরিকাঘাতের মতো হতে পারে, বিশেষ করে যখন দ্রুত নড়াচড়া করা হয়, যেমন হাঁচি দেওয়া, কাশি দেওয়া বা বিছানায় পাশ ফেরা। যদিও এটি সাধারণত ক্ষতিকারক নয়, তবে তীব্র ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

গ্যাস্ট্রিক ও পিত্তথলির সমস্যা

৭. গ্যাস্ট্রিক ও পিত্তথলির সমস্যা

পেটে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা পিত্তথলিতে পাথর (Gallstones) থাকলে সেই ব্যথা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার মধ্যে কাঁধও অন্যতম। বিশেষ করে ডান কাঁধে ব্যথা পিত্তথলির সমস্যার একটি সাধারণ লক্ষণ হতে পারে। পাকস্থলীর বা পাচনতন্ত্রের সমস্যা থেকে সৃষ্ট ব্যথা অনেক সময় রিফার্ড পেইন (Referred Pain) হিসেবে অনুভূত হয়, যেখানে ব্যথার উৎস এক জায়গায় হলেও ব্যথা অনুভূত হয় অন্য কোথাও। যদি কাঁধের ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব, পেট ফাঁপা বা হজমের সমস্যা থাকে, তাহলে এই কারণগুলো বিবেচনা করা উচিত।

৮. অ্যাক্টোপিক প্রেগন্যান্সি (বহিঃজরায়ু গর্ভাবস্থা)

এটি একটি অত্যন্ত জরুরি অবস্থা। যদি গর্ভের প্রথম দিকে হঠাৎ করে তীব্র কাঁধে ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষত যদি তার সাথে পেটে তীব্র ব্যথা, যোনিপথে রক্তপাত, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অন্যান্য উপসর্গ থাকে, তবে এটি এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি (Ectopic Pregnancy) বা বহিঃজরায়ু গর্ভাবস্থার লক্ষণ হতে পারে। এই অবস্থায় ভ্রূণ জরায়ুর বাইরে, সাধারণত ফ্যালোপিয়ান টিউবে (Fallopian Tube) বড় হতে শুরু করে, যা একটি জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে। যদি এমন লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অত্যাবশ্যক।

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথার লক্ষণ

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথার লক্ষণ

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা বিভিন্নভাবে অনুভূত হতে পারে:

  • কাঁধের পেশীতে টান বা জড়তা
  • ব্যথা সার্ভিকাল অঞ্চল (গলা) পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া
  • মাথার খুলির গোড়ায় ব্যথা, চোখে জ্বালা
  • তীব্র, ছুরিকাঘাতের মতো ব্যথা
  • ব্যথার সাথে বমি, মাথা ঘোরা, সংজ্ঞা হারানো, রক্তচাপ কমে যাওয়া ইত্যাদি (বিশেষত এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে)

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?

সব সময় গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা সাধারণ কারণে হয় না। নিচের লক্ষণগুলো থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:

  • হঠাৎ তীব্র কাঁধে ব্যথা, বিশেষত পেটের নিচে ব্যথার সাথে
  • ব্যথার সাথে উচ্চ জ্বর, বমি, মাথা ঘোরা, সংজ্ঞা হারানো
  • কাঁধের জয়েন্ট একেবারে নিশ্চল হয়ে যাওয়া
  • ত্বকের ফোলাভাব, রঙ পরিবর্তন

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা প্রতিরোধ ও প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা প্রতিরোধ ও প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা প্রতিরোধ ও প্রতিকার গুলো কি কি চলুন জেনে নেই –

কাঁধে ব্যথা চিকিত্সার ঘরোয়া উপায়

  • ঠান্ডা বা গরম সেঁক: ব্যথার স্থানে আইস প্যাক বা হালকা গরম পানির ব্যাগ ব্যবহার করুন।
  • ম্যাসাজ: হালকা ম্যাসাজ বা স্ব-ম্যাসাজ কাঁধের পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে।
  • যোগ ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং: বিশেষজ্ঞের পরামর্শে হালকা যোগব্যায়াম, স্ট্রেচিং, ওয়াল অ্যাঞ্জেল, শোল্ডার রোল, শোল্ডার ব্লেড স্কুইজ ইত্যাদি ব্যায়াম করুন।
  • সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা: বসা, দাঁড়ানো ও ঘুমানোর সময় সোজা ভঙ্গি বজায় রাখুন। সাপোর্টিভ ম্যাটারেস ও বালিশ ব্যবহার করুন।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম: অতিরিক্ত কাজ এড়িয়ে চলুন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
  • সাপোর্টিভ ব্রা: স্তনের ওজন বাড়ার ফলে কাঁধে চাপ পড়ে, তাই ভালো মানের ম্যাটার্নিটি ব্রা ব্যবহার করুন।
  • গ্যাস্ট্রিক ও পিত্তথলির যত্ন: কম মশলাদার ও হালকা খাবার খান, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা এড়ান।

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা এবং কাঁধে ব্যথা চিকিত্সা

কাঁধে ব্যথার চিকিত্সা পদ্ধতি

  • অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি স্প্রে/ক্রিম: ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথার স্থানে ব্যবহার করুন।
  • ব্যথানাশক ওষুধ: গর্ভাবস্থায় অনেক ব্যথানাশক নিরাপদ নয়, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করবেন না।
  • ফিজিওথেরাপি: বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপি করলে উপকার পাওয়া যায়।
  • প্রয়োজনে ডাক্তার দেখান: ব্যথা বাড়লে, বা উপরের ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথার কিছু বাস্তব টিপস

  • প্রতিদিন কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন, মানসিক চাপ কমান।
  • পরিবারের সহায়তা নিন, কাজের চাপ ভাগাভাগি করুন।
  • ঘুমানোর জন্য নতুন গদি, স্লিপিং মাস্ক, ও আরামদায়ক বালিশ ব্যবহার করুন।
  • সপ্তাহে অন্তত একদিন নিজেকে বিশ্রাম দিন।
  • স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খান, জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলুন।

একজন মায়ের গল্প

মিতা, ২৮ বছর বয়সী একজন গৃহিণী, প্রথমবারের মতো মা হতে চলেছেন। গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় মাসে তিনি হঠাৎ কাঁধে ব্যথা অনুভব করেন। প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও, ব্যথা বাড়তে থাকে এবং রাতে ঘুমাতে সমস্যা হয়। তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করেন এবং ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করেন। পরে একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেন। ডাক্তার জানান, এটি হরমোনাল পরিবর্তন, ঘুমের ভঙ্গি ও দৈনন্দিন কাজের কারণে হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শে হালকা ব্যায়াম, ম্যাসাজ ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পর মিতা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। এই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বুঝতে পারেন, গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা হলে ভয় না পেয়ে, সঠিক তথ্য ও চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথার চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করণীয় চার্ট

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথার চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করণীয় চার্ট

বিষয় করণীয়/প্রতিকার
হরমোনাল পরিবর্তন পর্যাপ্ত বিশ্রাম, হালকা ব্যায়াম, সঠিক ভঙ্গি
ঘুমের ভঙ্গি আরামদায়ক বালিশ ও গদি ব্যবহার, পাশ ফিরে শোয়া
গ্যাস্ট্রিক/পিত্তথলি সমস্যা মশলাদার খাবার এড়ানো, বেশি পানি পান করা
চোট/আঘাত সাবধানে চলাফেরা, ভারী জিনিস না তোলা
চিকিৎসা ডাক্তারের পরামর্শ, ফিজিওথেরাপি, ম্যাসাজ, গরম/ঠান্ডা সেঁক
ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা এবং কাঁধে ব্যথা চিকিত্সা

শেষ কথা

গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি অনেক সময় দৈনন্দিন জীবন ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। শারীরিক পরিবর্তনের ফলে অনেক গর্ভবতী নারী কাঁধে টান, অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করেন। তবে সঠিক তথ্য, সচেতনতা, এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই ব্যথা সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এই ব্যথার ব্যবস্থাপনায় পেইন কিউর (Pain Cure) হতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান। এটি একটি আধুনিক ও বিশ্বস্ত পেইন ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, যেখানে গর্ভকালীন কাঁধে ব্যথাসহ নানা ধরনের শারীরিক ব্যথার জন্য প্রাকৃতিক ও উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

পেইন কিউরে ব্যবহৃত হয় ওজোন থেরাপি, ইলেক্ট্রো আকুপাংচার, ম্যানুয়াল ফিজিওথেরাপি, টেকার থেরাপি, শকওয়েভ থেরাপি এবং পালস ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি (PEMF) – যেগুলো ব্যথা উপশমে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পেইন কিউরের চ্যানেলের মাধ্যমে আপনি ঘরোয়া ব্যায়াম, ব্যথা প্রতিরোধে সচেতনতা, এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন। সবশেষে বলব, গর্ভাবস্থায় কাঁধে ব্যথা হলে ভয় পাবেন না। নিজের যত্ন নিন, পরিবারের সহায়তা নিন এবং প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

যেকোনো পরামর্শ পেতে – উত্তরা- +8801727177436 এবং বনানী- +8801774678604  (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ পেইন কিউর

 

বিস্তারিত জানুন: কাঁধের জয়েন্টে এবং কাঁধে ব্যথা দূর করার ব্যায়াম

বিস্তারিত জানুন: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়

বিস্তারিত জানুন: সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি

বিস্তারিত জানুন: ঘাড়ের পিছনে ব্যথার কারণ

সাধারণ জিজ্ঞাসা

অনেক ব্যথানাশক গর্ভাবস্থায় নিরাপদ নয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করবেন না।

সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা, হালকা ব্যায়াম, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা এড়ানো।

আপনি যদি গর্ভাবস্থায় কোনো অস্বাভাবিক, নতুন বা অদ্ভুত লক্ষণ অনুভব করেন, যেমন তীব্র কাঁধের ব্যথা অথবা যে ব্যথা সহজে সারছে না, তাহলে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারকে জানান। যদি আপনার এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির (জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ) সন্দেহ হয় অথবা আপনি যদি কোনো তীব্র ব্যথা অনুভব করেন, তবে দেরি না করে জরুরি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করুন।

কাঁধের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন টেন্ডিনাইটিস, আর্থ্রাইটিস, ছেঁড়া তরুণাস্থি, এবং আরও অনেক শারীরিক অসুস্থতা বা আঘাত। এছাড়াও, ঘাড়ের মেরুদণ্ডে স্নায়ু আটকে গেলে (যা সার্ভিকাল রেডিকুলোপ্যাথি নামে পরিচিত) সেটিও কাঁধের ব্যথার একটি সাধারণ কারণ।

গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন কাঁধের ব্যথার একটি কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, রিলাক্সিন নামক হরমোন প্রসবের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রিলাক্সিন জয়েন্ট এবং লিগামেন্টগুলোকে শিথিল করে কাজ করে। পেলভিক এলাকার নমনীয়তার জন্য এটি অপরিহার্য হলেও, এটি আপনার শরীরের সমস্ত জয়েন্টকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে কাঁধে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন এবং শারীরিক পরিবর্তনের কারণে কাঁধের ব্লেডের মাঝখানে ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে, গর্ভবতী মায়েরা তাদের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে এই ব্যথা বেশি অনুভব করেন। প্রসবের জন্য শরীর প্রস্তুত হওয়ার সাথে সাথে, জরায়ু বড় হতে থাকে এবং এর ফলে আপনার শরীরের মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র সামনের দিকে সরে যায়, যা এই ব্যথার একটি কারণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *