ঘাড়ে ব্যথা খুবই অস্বস্তিকর হতে পারে, যা আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে। যদি আপনার ঘাড়ে অতিরিক্ত ব্যথা হয়, তবে কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করে আপনি আরাম পেতে পারেন। প্রাথমিকভাবে, বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। ঘাড়কে বেশি নড়াচড়া না করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম দিলে ব্যথা কমতে পারে। এর সাথে, ব্যথার জায়গায় ঠান্ডা বা গরম সেঁক দিতে পারেন। প্রথম ৪৮ ঘণ্টা ঠান্ডা সেঁক দিলে ফোলা এবং প্রদাহ কমতে পারে, এরপর গরম সেঁক মাংসপেশি শিথিল করতে সাহায্য করে। এই পোস্টের মাধ্যমে অতিরিক্ত ঘাড় ব্যথা হলে করণীয় কি তা নিয়ে আলোচনা করাও হয়েছে।
যদি ব্যথা তীব্র হয় বা সহজে না কমে, তাহলে কিছু সাধারণ ব্যথানাশক ঔষধ যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন সেবন করতে পারেন। তবে, কোনো ঔষধ সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘুমানোর সময় ঘাড়ের সঠিক অবস্থানের দিকে খেয়াল রাখুন; একটি আরামদায়ক কিন্তু দৃঢ় বালিশ ব্যবহার করুন যা আপনার ঘাড়কে সঠিক সাপোর্ট দেয়। সামনে ঝুঁকে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করার অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন, কারণ এতে ঘাড়ের উপর চাপ পড়ে। কাজের সময় নিয়মিত বিরতি নিন এবং ঘাড়ের কিছু হালকা ব্যায়াম করুন।
যদি উপরের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার পরেও ব্যথা না কমে, বা যদি ব্যথা বাড়তে থাকে, হাত বা বাহুতে ঝিনঝিন করা বা অসাড়তার মতো অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। ডাক্তার আপনার ঘাড় ব্যথার কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন, যা ফিজিওথেরাপি, ঔষধ বা অন্য কোনো বিশেষ চিকিৎসার মাধ্যমে হতে পারে। মনে রাখবেন, দীর্ঘস্থায়ী ঘাড় ব্যথা অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ এটি আরও গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ ও ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।
প্রাথমিক পদক্ষেপ ও বিশ্রাম নিতে হবে
ঘাড়ে অতিরিক্ত ব্যথা হলে কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। শুরুতেই আপনার ঘাড়কে বিশ্রাম দিন। এর মানে হলো, এমন কোনো কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা যা আপনার ঘাড়ে চাপ সৃষ্টি করে, যেমন ভারী জিনিস তোলা বা দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহার করা। ঘাড়কে অযথা নাড়াচাড়া করা বা মোচড়ানো থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে। সহজভাবে বলতে গেলে, আপনার ঘাড়কে একটি নিরাপদ ও আরামদায়ক অবস্থানে রাখুন যেন তা নিজে থেকেই সেরে ওঠার সুযোগ পায়।
এই প্রাথমিক বিশ্রামের সময়, আপনি ঘাড়ের উপর চাপ কমাতে পারবেন এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। এই পর্যায়ে, আপনার ঘাড়ের মাংসপেশিগুলোকে শিথিল হতে দিন। অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া বা এমন কোনো কাজ যা ঘাড়কে অতিরিক্ত খাটাতে পারে, তা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন, ঘাড়কে যত বেশি বিশ্রাম দেবেন, তত দ্রুত এটি সেরে ওঠার সুযোগ পাবে এবং আপনার অস্বস্তিও কমবে।
যদি ব্যথা তীব্র হয় বা সহজে না কমে, তাহলে কিছু সাধারণ ব্যথানাশক ঔষধ যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন সেবন করতে পারেন। তবে, কোনো ঔষধ সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘুমানোর সময় ঘাড়ের সঠিক অবস্থানের দিকে খেয়াল রাখুন; একটি আরামদায়ক কিন্তু দৃঢ় বালিশ ব্যবহার করুন যা আপনার ঘাড়কে সঠিক সাপোর্ট দেয়। সামনে ঝুঁকে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করার অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন, কারণ এতে ঘাড়ের উপর চাপ পড়ে। কাজের সময় নিয়মিত বিরতি নিন এবং ঘাড়ের কিছু হালকা ব্যায়াম করুন।
যদি উপরের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার পরেও ব্যথা না কমে, বা যদি ব্যথা বাড়তে থাকে, হাত বা বাহুতে ঝিনঝিন করা বা অসাড়তার মতো অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। ডাক্তার আপনার ঘাড় ব্যথার কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন, যা ফিজিওথেরাপি, ঔষধ বা অন্য কোনো বিশেষ চিকিৎসার মাধ্যমে হতে পারে। মনে রাখবেন, দীর্ঘস্থায়ী ঘাড় ব্যথা অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ এটি আরও গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
ঠান্ডা ও গরম থেরাপি
- ঘাড় ব্যথার প্রথম ৪৮ ঘণ্টার জন্য ঠান্ডা থেরাপি খুবই কার্যকর। এই সময়ে দিনে কয়েকবার, প্রতিবার ১৫-২০ মিনিটের জন্য ব্যথার জায়গায় বরফ বা ঠান্ডা প্যাক ব্যবহার করুন। ঠান্ডা সেঁক প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। একটি পাতলা কাপড় দিয়ে বরফ মুড়িয়ে ত্বকের উপর ব্যবহার করলে সরাসরি বরফের সংস্পর্শ এড়ানো যাবে এবং ফ্রস্টবাইট হওয়ার ঝুঁকি কমবে।
- ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে, গরম থেরাপি ব্যবহার করা উপকারী। হালকা গরম পানিতে গোসল করতে পারেন অথবা গরম প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। গরম সেঁক মাংসপেশি শিথিল করতে সাহায্য করে এবং আক্রান্ত স্থানে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা ব্যথা সারাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। গরম সেঁকও ১৫-২০ মিনিটের বেশি ব্যবহার না করাই ভালো।
সাইনাসের ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে এই পোস্টটি পড়ুন।
ঘাড়ের ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং করতে হবে
ঘাড়ের ব্যথা কিছুটা কমলে, ধীরে ধীরে কিছু হালকা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং শুরু করা যেতে পারে। এই ব্যায়ামগুলো ঘাড়ের নমনীয়তা বাড়াতে এবং পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি আপনার মাথাকে ধীরে ধীরে সামনে-পেছনে এবং ডান-বামে ঝোঁকাতে পারেন। এছাড়াও, ঘাড়কে ঘড়ির কাঁটার দিকে (ক্লকওয়াইজ) এবং উল্টো দিকে (অ্যান্টিক্লকওয়াইজ) আলতো করে ঘোরানো যেতে পারে। এই ব্যায়ামগুলো করার সময় খেয়াল রাখবেন যেন কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি না হয়। যদি ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে তৎক্ষণাৎ ব্যায়াম বন্ধ করুন।
ঘাড়ের ব্যথা কমাতে আরও কিছু উপকারী ব্যায়াম হলো চিন টাক (Chin tuck), যেখানে আপনার চিবুক বুকের দিকে টেনে ঘাড় সোজা রাখতে হয়। এছাড়াও, আপার ট্রাপিজিয়াস স্ট্রেচ (Upper trapezius stretch) এবং লেভেটর স্ক্যাপুলি স্ট্রেচ (Levator scapulae stretch) ঘাড়ের উপরের পেশিগুলোর টান কমাতে সাহায্য করে। এই স্ট্রেচগুলো কীভাবে করবেন, তা আপনি অনলাইনে খুঁজে নিতে পারেন অথবা একজন ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে জেনে নিতে পারেন।
ঘাড়ের সঠিক ভঙ্গি ও অঙ্গবিন্যাস
ঘাড়ের ব্যথায় সঠিক ভঙ্গি ও অঙ্গবিন্যাস মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি বসেন, চেষ্টা করুন সোজা হয়ে বসতে এবং আপনার কাঁধকে শিথিল রাখুন। কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখুন যেন স্ক্রিন আপনার চোখের সমান উচ্চতায় থাকে। এতে আপনার ঘাড়কে নিচে ঝুঁকাতে হবে না এবং ঘাড়ের উপর অযথা চাপ পড়া কমে যাবে। এই সহজ অভ্যাসগুলো দৈনন্দিন জীবনে মেনে চললে দীর্ঘস্থায়ী ঘাড় ব্যথার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
দীর্ঘক্ষণ একভাবে বসে কাজ করলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে, তাই প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিটের বিরতি নেওয়া জরুরি। এই বিরতিতে আপনি উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করতে পারেন অথবা ঘাড়ের কিছু হালকা স্ট্রেচিং ব্যায়াম করতে পারেন। ঘুমানোর সময় সাপোর্টিভ বালিশ ব্যবহার করুন যা আপনার ঘাড়ের স্বাভাবিক বাঁককে সমর্থন করে। এমন বালিশ ব্যবহার করুন যা আপনার ঘাড়কে অতিরিক্ত উঁচু বা নিচু করে না, কারণ ভুল বালিশ ঘাড় ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে। সঠিক বালিশ আপনার ঘাড়ের পেশিগুলোকে বিশ্রাম দিতে সাহায্য করবে।
সিজারের পর মাথা ব্যথা কেন হয় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
অতিরিক্ত ঘাড় ব্যথা হলে করণীয় হিসেবে এর ঘরোয়া প্রতিকার
ঘাড়ের ব্যথায় কিছু ঘরোয়া প্রতিকার চেষ্টা করে দেখতে পারেন, যা ব্যথা উপশমে সহায়ক হতে পারে। তবে, মনে রাখবেন এগুলো সাময়িক উপশম দিতে পারে এবং তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। একটি পরিষ্কার কাপড় আপেল সিডার ভিনেগারে ভিজিয়ে নিন এবং ব্যথার স্থানে আধা ঘণ্টার জন্য রেখে দিন। দিনে কয়েকবার এটি করলে ব্যথা কিছুটা কমতে পারে। এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য ঘাড়ের পেশিগুলোর টান কমাতে সাহায্য করতে পারে।
আদা চা
আদা তার প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এক কাপ গরম পানিতে আদা কুচি দিয়ে ১০-১৫ মিনিট ফুটিয়ে আদা চা তৈরি করুন। এই চা দিনে ২-৩ বার পান করলে শরীরের প্রদাহ কমতে পারে এবং ঘাড়ের ব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে।
হলুদ
হলুদ একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। ব্যথা কমাতে আপনি হলুদের পেস্ট তৈরি করে ঘাড়ে লাগাতে পারেন। অল্প হলুদের গুঁড়ো নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন এবং ব্যথার স্থানে আলতো করে মাখুন। অথবা, এক গ্লাস গরম দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করুন। হলুদ দুধ রাতে ঘুমানোর আগে পান করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ইপসম লবণ
ইপসম লবণ (ম্যাগনেসিয়াম সালফেট) পেশি শিথিল করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। গরম পানিতে প্রায় এক কাপ ইপসম লবণ মিশিয়ে গোসলের জন্য ব্যবহার করুন। ইপসম লবণের পানিতে প্রায় ১৫-২০ মিনিট শরীর ডুবিয়ে রাখলে ঘাড়ের পেশিগুলো শিথিল হবে এবং ব্যথা কমতে সাহায্য করবে।
প্রতিরোধ ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন
- নিয়মিত ঘাড়ের ব্যায়াম করুন।
- সঠিক অঙ্গবিন্যাস বজায় রাখুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।
- স্ট্রেস কমাতে যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করুন।
হঠাৎ মাথা ব্যথা হওয়ার কারণ কি তা আমাদের এই পোস্ট থেকে জেনে নিন।
অতিরিক্ত ঘাড় ব্যথা হলে বিশেষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
ঘাড়ে অতিরিক্ত ব্যথা হলে ফিজিওথেরাপি একটি অত্যন্ত কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি শুধু ব্যথা কমায় না, বরং ঘাড়ের কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে এবং ভবিষ্যতে ব্যথা প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। ফিজিওথেরাপি বিভিন্ন ধাপ এবং পদ্ধতির সমন্বয়ে গঠিত, যা প্রতিটি রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।
প্রধান ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি
মূল্যায়ন ও ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা
প্রথমেই একজন ফিজিওথেরাপিস্ট আপনার ঘাড়ের অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করেন। তিনি আপনার ঘাড়ের শক্তি, নড়াচড়ার ক্ষমতা এবং ব্যথার কারণ বোঝার চেষ্টা করেন। এই মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে, আপনার নির্দিষ্ট সমস্যা এবং লক্ষণ অনুযায়ী একটি ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে আপনি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন।
ম্যানুয়াল থেরাপি
ম্যানুয়াল থেরাপিতে ফিজিওথেরাপিস্ট তার হাত ব্যবহার করে আপনার ঘাড়ের পেশি এবং জয়েন্টগুলোতে কাজ করেন। এর মধ্যে ম্যাসাজ, মোবিলাইজেশন (জয়েন্টের নড়াচড়া বাড়ানো) এবং ম্যানিপুলেশন (নির্দিষ্ট কৌশলে জয়েন্টকে সঠিক অবস্থানে আনা) অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে পেশির টান কমে, জয়েন্টের নড়াচড়া বাড়ে এবং ব্যথা উপশম হয়।
ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং
ফিজিওথেরাপির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নির্দিষ্ট ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং শেখানো। এই ব্যায়ামগুলো ঘাড় ও কাঁধের পেশিগুলোকে শক্তিশালী এবং নমনীয় করে তোলে। এর মধ্যে রয়েছে:
- মাথা সামনে-পেছনে, ডান-বামে এবং ঘুরিয়ে নাড়ানো: ঘাড়ের নমনীয়তা বাড়ানোর জন্য।
- আইসোমেট্রিক ব্যায়াম: যেখানে পেশি সংকুচিত হয় কিন্তু ঘাড় নড়াচড়া করে না, যা পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- স্ক্যাপুলার স্ট্যাবিলাইজেশন: কাঁধের অস্থিরতা কমাতে ও পেশি স্থিতিশীল করতে।
- চিবুক টাক (Chin tuck): ঘাড়ের গভীর পেশি শক্তিশালী করতে এবং সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখতে।
- আপার ট্রাপিজিয়াস স্ট্রেচ ও লেভেটর স্ক্যাপুলি স্ট্রেচ: ঘাড়ের উপরের দিকের পেশিগুলোর টান কমাতে।
এই ব্যায়ামগুলো ধাপে ধাপে শেখানো হয় এবং সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখার উপর জোর দেওয়া হয়। ব্যথা তীব্র থাকলে ব্যায়াম এড়িয়ে চলতে বলা হয়।
ইলেকট্রোথেরাপি ও আধুনিক প্রযুক্তি
ব্যথা কমাতে এবং আরোগ্য প্রক্রিয়া দ্রুত করতে ফিজিওথেরাপিতে বিভিন্ন ইলেকট্রোথেরাপি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়:
- TENS (Transcutaneous Electrical Nerve Stimulation): এটি ত্বকের মাধ্যমে হালকা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ব্যবহার করে ব্যথা কমায়।
- আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি: উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে প্রদাহ ও ব্যথা কমানো হয়।
- আধুনিক MCU (Multi-Cervical Unit) হলো ঘাড়ের শক্তি ও নড়াচড়ার ক্ষমতা পরিমাপ এবং উন্নতির জন্য ব্যবহৃত একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র। এটি নিয়ন্ত্রিত ও নিরাপদ পুনর্বাসন নিশ্চিত করে, যা ঘাড়ের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক।
- INDIBA Activ, MAGNETOLITH EMTT, LightStim Red Light Therapy: এই রেডিওফ্রিকোয়েন্সি, ম্যাগনেটিক এবং লাইট থেরাপিগুলো কোষের পুনর্গঠন এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দ্রুত নিরাময়ে সহায়তা করে।
ট্রাকশন থেরাপি
ট্রাকশন থেরাপিতে ম্যানুয়ালি বা যন্ত্রের সাহায্যে ঘাড়কে ধীরে ধীরে টেনে স্পাইনাল ডিস্ক এবং স্নায়ুর উপর চাপ কমানো হয়। এটি বিশেষত ডিস্ক-সম্পর্কিত ব্যথার জন্য উপকারী হতে পারে।
সফট টিস্যু মোবিলাইজেশন
এই পদ্ধতিতে ম্যাসাজ ও মায়োফ্যাসিয়াল রিলিজ (পেশি ও সংযোগ টিস্যুর টান কমানোর কৌশল) ব্যবহার করে পেশি এবং টিস্যুগুলোর টান কমানো হয়।
ড্রাই নিডলিং ও আকুপাংচার
কিছু ফিজিওথেরাপিস্ট ড্রাই নিডলিং বা আকুপাংচার ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট পয়েন্টে সূচ প্রবেশ করিয়ে পেশির টান এবং ব্যথা কমানো হয়।
হিট ও কোল্ড থেরাপি
ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য গরম প্যাড (পেশি শিথিল করতে ও রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে) এবং বরফ প্যাড (প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে) ব্যবহার করা হয়।
অঙ্গবিন্যাস ও কার্যকরী প্রশিক্ষণ
ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে সঠিক অঙ্গবিন্যাস শেখান এবং দৈনন্দিন কাজ করার সময় ঘাড়ে চাপ কমানোর কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেন। এর মধ্যে কাজের সময় ঘাড়ের সুরক্ষা এবং কম্পিউটার ব্যবহারের সঠিক ভঙ্গি অন্তর্ভুক্ত।
অতিরিক্ত ঘাড় ব্যথায় ফিজিওথেরাপি একটি বহুস্তরবিশিষ্ট এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা। এটি ম্যানুয়াল থেরাপি, নির্দিষ্ট ব্যায়াম, আধুনিক প্রযুক্তি, অঙ্গবিন্যাস সংশোধন এবং রোগীর নিজস্ব অংশগ্রহণের সমন্বয়ে দীর্ঘমেয়াদী আরোগ্য এবং ব্যথার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ঘাড় ব্যথার জন্য যেকোনো চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা
ঘাড়ে ব্যথা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা হলেও, এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ব্যথা শুরু হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, বিশ্রাম এবং সঠিক যত্ন হলো প্রাথমিক চিকিৎসার মূল চাবিকাঠি। ঘাড়কে অতিরিক্ত নড়াচড়া থেকে বিরত রাখুন এবং ঠান্ডা বা গরম সেঁক ব্যবহার করে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করুন। যদি ব্যথা হালকা হয়, তাহলে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো সাধারণ ব্যথানাশক ঔষধ সাময়িক আরাম দিতে পারে।
তবে, যদি ব্যথা তীব্র হয়, দীর্ঘস্থায়ী হয়, অথবা হাত বা বাহুতে ঝিনঝিন করা বা অসাড়তার মতো অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবহেলা করলে এটি আরও গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে। চিকিৎসক আপনার ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, যেমন ফিজিওথেরাপি বা অন্য কোনো বিশেষ পদ্ধতির সুপারিশ করতে পারবেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক ভঙ্গি এবং অভ্যাস গড়ে তোলা। কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারের সময় স্ক্রিন চোখের সমান উচ্চতায় রাখুন, দীর্ঘক্ষণ একভাবে বসে না থেকে নিয়মিত বিরতি নিন এবং ঘুমানোর সময় ঘাড়কে সঠিক সাপোর্ট দেয় এমন বালিশ ব্যবহার করুন। এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধে এবং সুস্থ জীবনযাপনে আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।
ব্যথা বিষয়ক যেকোনো পরামর্শ পেতে – উত্তরা- +8801727177436 এবং বনানী- +8801774678604 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ পেইন কিউর

Dr. Saiful Islam, PT, is a Consultant Physiotherapist with expertise in Orthopedics. He holds a BPT from Dhaka University, an MPT, and a Postgraduate Certification in Acupuncture from India, with specialized training in Ozone Therapy.